নয়াদিল্লি, ২৭ অক্টোবর : মুদ্রিত, টিভি ও ডিজিটাল মিডিয়ায় নেতৃত্ব-পদের ৯০ শতাংশ রয়েছে উচ্চ বর্ণের দখলে। প্রথম সারির মিডিয়া সংস্থাগুলির দায়িত্বে নেই তপশিলি জাতি বা উপজাতির প্রতিনিধিরা। এমনটাই জানা যাচ্ছে অক্সফ্যাম ইন্ডিয়া-নিউজলন্ড্রি রিপোর্টের দ্বিতীয় সংস্করণ থেকে। ২০১৯ সালের পর মিডিয়ায় বৈচিত্র্য নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো ভোটাভুটি হয়েছিল এবং এর ফলাফল ভীষণ উদ্বেগজনক। হিন্দি ও ইংরেজি টিভি বিতর্কে প্যানেলিস্টদের মধ্যে ৫ শতাংশেরও কম ছিল এসসি বা এসটি শ্রেণির মানুষ। ১৪ অক্টোবরে প্রকাশিত এই রিপোর্টে আরও উঠে এসেছে, হিন্দি ও ইংরেজি সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতি পাঁচটি নিবন্ধের প্রায় একটি প্রান্তিক শ্রেণির মানুষের লেখা। অন্যদিকে, তিনটিরই রচয়িতা জেনারেল কাস্ট। প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়ার প্রাক্তন সভাপতি ও প্রবীণ সাংবাদিক গৌতম লাহিড়ী এই বিষয়ে বলেন,”এটা সত্যি যে, ভারতের মূল ধারার মিডিয়ায় উচ্চ বর্ণের আধিপত্য এবং বিপুল সংখ্যক মানুষ শুধু তাঁদের তৈরি করা খবরের বিষয় মাত্র। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতর্ক রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ। এটা বৈধ প্রশ্ন যে, সেই প্রতর্ক কীভাবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে যদি দলিত জনসংখ্যার বিপুল অংশের মতামত ও স্বরের প্রতিনিধিত্ব করার মতো কেউ না থাকেন। আমি একমত যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের রমরমার পরেও মূল ধারার মিডিয়ার সাংগঠনিক কাঠামো বদলায়নি।” তিনি আরও বলেন,”আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে অনেক কথা বলে দেয় এটা। শিক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে দলিত সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের সমস্যা রয়েছে। ভারতের সরকারি বিদ্যালয়গুলিতে বর্ণভিত্তিক বৈষম্যের ফলে এই বড় অসাম্য এবং অনেক ক্ষেত্রে পড়ুয়ারা পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যায় না। সকল শিশু যাতে প্রাথমিক শিক্ষা পায় তা নিশ্চিত করতে ২০০৯ সালে শিক্ষার অধিকার আইন আনা হয়েছিল, কিন্তু পরিকাঠামোগত সহায়তা মেলেনি। এই সমস্ত বাধা পেরিয়ে যাঁরা শিক্ষা লাভ করে্ন এবং সাংবাদিক হতে চান, তাঁরা যথাযোগ্য স্বীকৃতি পান না সংবাদ সংস্থায়। এটা কঠিন সত্য।” পিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি লাহিড়ীর মতে,”এই বিষয়ে একটা রুপোলি রেখা দেখা যাচ্ছে। উচ্চ বর্ণের কিছু সিনিয়র সাংবাদিক দলিত সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সামাজিক বৈষম্য ও বর্বরতা নিয়ে রিপোর্ট করার মাধ্যমে সাংবাদিকতার ভাষ্যটাই বদলে দিতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাঁদের সংখ্যা ভয়ানক রকম ভাবে কম। দলিত নিগ্রহের খবর মাঝে মাঝে মূল ধারার মিডিয়ায় জায়গা করে নেয়। তারপরও, সেই ঘটনার যুক্তিযুক্ত পরিসমাপ্তি কী হল, তা নিয়ে আর খোঁজ রাখা হয় না। বিচার প্রক্রিয়ার ফলো-আপ করা হয় না। শেষ পর্যন্ত, এগুলি পাঠকদের উপযুক্ত মনোযোগ পায় না কিছু সময় পর।” প্রবীণ সাংবাদিক ও প্রখ্যাত সামাজিক-মানবাধিকার কর্মী জন দয়াল বলেন,”অক্সফ্যাম ও নিউজলন্ড্রির গবেষকরা যদি মিডিয়া কর্পোরেশনগুলির মালিক, প্রধান অংশীদারদের অন্তর্ভুক্ত করতেন তাহলে খবর সংগ্রহ, সম্পাদনা, সংবাদপত্রে প্রকাশ করার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া এবং টিভি বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ৯৯ শতাংশই হয়ত উচ্চ বর্ণের দখলে।”
