দিলীপ ঘোষ বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি থাকাকালীন তাঁর বিশ্বস্ত সেনাপতি ছিলেন সায়ন্তন বসু। যদিও সুকান্ত মজুমদার রাজ্য সভাপতি হয়েই পূর্বসূরির বিশ্বস্ত সেনাপতিকে সরিয়ে দিয়েছেন। রাজ্য বিজেপির কোনও কমিটিতেই রাখা হয়নি প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদককে। দলে কোণঠাসা হওয়ার পরেই লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গিয়েছিলেন বিজেপির বসু। এবার সেই তিনিই রাজ্যে দলের বেহাল দশা নিয়ে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডাকে বিস্ফোরক চিঠি পাঠিয়েছেন। সেই চিঠিতে যেমন বঙ্গ বিজেপিকে দলবদলুদের সিন্ডিকেট হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন, তেমনই সিবিআই ও ইডির ভয় দেখিয়ে তৃণমূল ভাঙানোর চেষ্টার মতো ন্যক্কারজনক কাজ চলছে বলেও অভিযোগ করেছেন। যদিও সায়ন্তনের চিঠি নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি হননি বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতিকে পাঠানো চিঠিতে বঙ্গ বিজেপির বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ছত্রে-ছত্রে ক্ষোভ উগরে দিয়ে সায়ন্তন লিখেছেন,‘১৯৮০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত যাঁরা দলের জন্য প্রাণপাত করেছেন তাঁদের আত্মত্যাগকে গত বিধানসভা ভোটে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। উল্টে তৃণমূল থেকে যাঁরা ডিগবাজি খেয়ে এসেছিলেন তাঁদেরই ভোটে নিশ্চিত আসনে টিকিট দেওয়া হয়েছে। প্রার্থী বাছাইয়ে ভুলের জন্য দুর্গাপুর, পূর্ব, বিধাননগর, পানিহাটি, ব্যারাকপুর, সিঙ্গুর, সিউড়ি, জলপাইগুড়ি, সপ্তগ্রাম, কালনা, ভবানীপুরের মতো আসনে হারতে হয়েছে।’আন্দোলনের রাস্তা ছেড়ে বঙ্গ বিজেপির বর্তমান নেতৃত্ব যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা কথা ছড়ানোর মতো নোংরা খেলায় মেতে উঠেছে তা উল্লেখ করে সায়ন্তন লিখেছেন, ‘রাজ্যে বিজেপি রয়েছে কেবল ফেসবুক, টুইটারে। রাস্তার আন্দোলনে নেই। দলের কিছু নেতা ইউটিউব আর ফেসবুকে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে।’ বঙ্গ বিজেপি যে রাজ্যের বিরোধী পরিসর থেকে ক্রমশ পিছু হঠছে আর সেই জায়গায় সিপিএম উঠে আসছে তা উল্লেখ করে সায়ন্তন লিখেছেন, ‘সম্প্রতি কলকাতায় সিপিএমের যুব শাখার কর্মসূচিতে কোনও ট্রেন, বাস ভাড়া না করেও ৩৫ হাজারের জমায়েত করা হয়েছিল। ফলে মনে হচ্ছে পঞ্চায়েত ভোটে ফের তৃণমূলের সঙ্গে সিপিআইএমের লড়াই হবে।’এ নিয়ে সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন, শুভেন্দু অধিকারীরা যেভাবে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ চালাচ্ছে, তাতে যে হিতে বিপরীত ফল হচ্ছে তা উল্লেখ করে দিলীপ ঘনিষ্ঠ নেতা লিখেছেন,‘মানুষের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হচ্ছে যে, সিবিআই,ইডি-র সমনের ভয়ে আরও অনেকে বিজেপিতে যোগ দেবেন। রাজ্য বিজেপির উপরে মানুষের ভরসা কমছে। তাঁদের মনে ধারণা জন্মেছে যে রাজ্য বিজেপি তৃণমূলের বিক্ষুব্ধদের সংগঠন হয়ে উঠেছে।’ দলকে ঘুরে দাঁড় করাতে হলে ২০১৯ সালের আগে যে নীতি নিয়ে সংগঠন চালানো হয়েছিল,তা ফিরিয়ে আনা উচিত বলে সওয়াল করেছেন সায়ন্তন।
