নিজস্ব প্রতিবেদক: পাঁচ মাস আটকে রাখার পরে অবশেষে সর্বশিক্ষা মিশনে রাজ্যের বকেয়ার সামান্য মেটাল কেন্দ্র। সর্বশিক্ষা মিশন প্রকল্পে রাজ্যের পাওনা ১,৬০০ কোটি টাকার মধ্যে ৯৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে মোদি সরকার। যদিও একশো দিনের কাজ থেকে শুরু করে বাংলার বাড়ি- বিভিন্ন প্রকল্পে পাওনা বকেয়া কবে মেটানো হবে, তা নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করা হয়নি। নবান্নের শীর্ষ আমলারা মনে করছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার যে অভিযোগ উঠেছে তা থেকে চোখ ঘোরাতেই সর্বশিক্ষা মিশনের বকেয়া টাকা মেটানোর রাস্তায় হেঁটেছে মোদি সরকার।
গত বিধানসভা ভোটে নবান্ন দখলের স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়ার পর থেকেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সহ বঙ্গ বিজেপি নেতাদের আবদার রাজ্য সরকারকে ভাতে মারার পথ নিয়েছে বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকার। নানা অছিলায় ১০০ দিনের কাজ থেকে শুরু করে নানা প্রকল্পের টাকা আটকে রাখা হয়েছে। ওই টাকা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য বার বার সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। গত কয়েক মাস আগে বকেয়া আদায়ে দিল্লিও গিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করে বকেয়া পাওনার একটি তালিকা তুলে দিয়েছিলেন। ওই তালিকা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকল্পের বকেয়া হিসেবে কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের প্রাপ্য ৩৯ হাজার ৩২৩ কোটি টাকার মতো। আম্ফান সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য পাওনা ৬০ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে মোট পাওনা এক লক্ষ ৯৬৮.৪৪ কোটি টাকা। বকেয়া যাতে দ্রুত মিটিয়ে দেওয়া হয়, তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই অনুরোধেও চিড়ে ভেজেনি। অর্থাৎ বাংলার প্রাপ্য টাকা মেটানোর রাস্তায় হাঁটেনি।
সর্বশিক্ষা মিশন অভিযানে কেন্দ্রের কাছে বাংলার পাওনা ছিল ১,৬০০ কোটি টাকা। সেই পাওনা মেটানোর জন্য শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে কেন্দ্রের কাছে একাধিকবার দরবার করা হয়েছিল। অবশেষে সেই পাওনার পুরো না মিটিয়ে মাত্র ৯৫৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের এক শীর্ষ আমলার কথায়, ‘একাধিক প্রকল্পের টাকা আটকে থাকার জন্য রাজ্যের কোষাগারের হাল শোচনীয়। সাধারণ মানুষের কথা ভেবে জনমুখী প্রকল্পগুলিকে চালাতে গিয়ে পরিস্থিতি দিন দিন সঙ্কটজনক হয়ে উঠেছে। সর্বশিক্ষা মিশনের পরিবর্তে কেন্দ্র যদি একশো দিনের কাজ কিংবা বাংলার বাড়ি প্রকল্পের বকেয়া মেটাত তাহলে ভাল হত। ওই বকেয়া কবে মেটানো হবে তা নিয়ে উচ্চবাচ্য করছে না। পঞ্চায়েত ভোটের আগে টাকার অভাবে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার সহ জনমুখী প্রকল্পগুলি যাতে বন্ধ হয়ে যায়, রাজ্য সরকারকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়, তার জন্য প্রাপ্য টাকা আটকে রাখা হয়েছে।’ সর্বশিক্ষা মিশনের বরাদ্দকে আশার আলো হিসেবে দেখতে নারাজ রাজ্যের শীর্ষ আমলারা।
