বেলপাহাড়ি: বিরসা মুন্ডার ১৪৭ তম জন্মজয়ন্তী পালন করা হলো জঙ্গলমহলের একসময়ের মাওবাদীদের আঁতুড়ঘর ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়িতে গিয়ে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্যস্তরের এ কর্মসূচিটি নেওয়া হয়েছিল জঙ্গলমহলে। উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার ২:৫০ নাগাদ হেলিকপ্টারে করে বেলপাহাড়িতে হাজির হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় প্রায় ৯৯ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলন্যাস করেন তিনি। বিরসা মুন্ডা কে শ্রদ্ধা জানিয়ে অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে বিলি করলেন বিভিন্ন জিনিসপত্রও। মঞ্চ থেকে জানালেন আদিবাসীদের জন্য গত ১১ বছরে কি কি করা হয়েছে। আরো বললেন-“বিরসা মুন্ডার জন্মদিনে রাজ্যের ছ’টি মেডিকেল কলেজে নতুন ক্লাস শুরু করা হলো। বাড়লো ৬০০ আসন।” সভা শেষে আর আকাশ পথে হেলিকপ্টারে না গিয়ে সড়কপথে ঝাড়গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার পথে রাস্তায় বিভিন্ন আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামে ঢুকে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। কুরচিবনি এলাকায় আদিবাসীদের বাড়িতে গিয়ে কে কি সুবিধা পাচ্ছেন, কি সমস্যা রয়েছে- তার খোঁজ নেন। আদিবাসীরা পানীয় সমস্যা নিয়ে আবেদন করলে দ্রুত সমাধানের আশ্বাসও দিলেন তিনি।
এদিন মঞ্চের বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী বিরসা মুন্ডাকে শ্রদ্ধা জানানোর পরে বলেন- “বিরসা মুন্ডার ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই ছিল আপসহীন। জন্ম হয়েছিল ঝাড়খন্ডে। পড়াশোনাতে বুদ্ধিমান ছিলেন। ১৯ বছর বয়সেই রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছিলেন। তার অবদানে তিনি চিরকাল আপনাদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। তাকে বলা হয় ধরতি আবা অর্থাৎ বিশ্বপিতা বা ভগবান বলা হয়। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কারণে ব্রিটিশ সরকার তাকে গ্রেফতার করেছিল। ২৫ বছর বয়সে কারাগারের মধ্যে কোন এক অজ্ঞাত কারণে তার মৃত্যু হয়েছিল। বিরসা মুন্ডার কর্মকাণ্ড চিরকাল আমরা স্মরণ করে রাখবো। বিরসা মুন্ডার ও রঘুনাথ মুরমুর জন্মদিনকে আমরা ছুটি ঘোষণা করেছি।”
“মা মাটি মানুষের সরকার সব সময় আপনাদের সঙ্গে থাকবে। কোন মাপকাঠিতে আপনারা পিছিয়ে নেই। তবে আমি জানি মানুষের এখানে অসুবিধা হচ্ছে ১০০ দিনের কাজে। কেন্দ্রীয় সরকার এখান থেকে যে টাকা তুলে নিয়ে যায় সেখান থেকেই ১০০ দিনের টাকা আমরা পাই। ওরা আমাদের থেকে জিএসটির নামে টাকা তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু ১০০ দিনের টাকা কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের দিচ্ছে না। যারা কাজ করেছে তাদের ন্যায্য প্রাপ্য এটা। কেন্দ্রীয় সরকার এটা দয়া করে দিচ্ছে তা নয়। আগে রাজ্য সরকার ট্যাক্স সংগ্রহ করত, এখন কেন্দ্রীয় সরকার সব ট্যাক্স নেয়। কিন্তু এখন মানুষকে টাকাই দিচ্ছে না। যায় কিনতে যাচ্ছেন তার জন্য ট্যাক্স দিল্লি নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের রাজ্যকে আর তা দিচ্ছে না। একশ দিনের কাজের টাকা বাধ্যতামূলক ,সাংবিধানিক অধিকার আমাদের। তা সত্ত্বেও এক বছর আগে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কথা বলে এসেছি এ বিষয়ে। এবার কি পায়ে ধরতে হবে? আমাদের টাকা আমাদের ফিরিয়ে দাও। তা না হলে জিএসটি বন্ধ করে দাও। আমাদের টাকা আমাদের দিতে হবে নইলে গদি ছাড়তে হবে। একশ দিনের টাকা না দিলে মানুষ সহ্য করবে না, এরা গরিব মানুষ।”
“বাংলার বাড়ি আমরা তৈরি করছিলাম । ৫০ লক্ষ এমন বাড়ি পড়ে রয়েছে আমাদের, ওরা টাকা দিচ্ছে না। গ্রামীণ রাস্তাগুলো তৈরি করার টাকা পাই আমরা। আমাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এটা কেড়ে নেওয়া চলবে না। এটা ছিল বিরসা মুন্ডার অভিযান। বিরসা মুন্ডা বলতেন রাজা চালাবে না দেশ, দেশ আমরা চালাবো। আদিবাসী মানুষকে নিজের উপর নির্ভর করতে হবে, কারো উপর নির্ভর করবো না। আমাদের টাকায় কেন্দ্র করে খাবে, আর আমাদের টাকা গরীব লোককে দেবে না। এটা হতে পারে না। আমাকে বলে-” সব টাকা বন্ধ করে দেব”, তাহলে আমরাও তো বন্ধ করে দিতে পারি। কেন তোমাকে জিএসটির ট্যাক্স দেবে লোকেরা? মানুষের জন্য দেশ ,নেতার জন্য দেশ নয়। মানুষ দেশ তৈরি করে। তুমি আমার টাকা তুলে নিয়ে যাবে, আর আমাকে দেবে না- এটাকে এক বাক্যে বলে প্রতারিত করা। মানুষকে লাঞ্ছনা, বঞ্চনা করা। তা সত্ত্বেও জেনে রাখবেন আমার মনের জোর আছে।”
“এক সময় আমি যখন জঙ্গলমহলে আসতাম, মানুষ রাস্তায় বেরোতে ভয় পেতো দেখতাম। ঝিটকার জঙ্গল দিয়ে রাস্তা পার হতে মানুষের বুক কাঁপতো। ছেলেমেয়েরা পড়তে যেতে পারত না। আজ মানুষ শান্তিতে আছে। আমরা জঙ্গলের অধিকার আদিবাসীদের দিয়েছি। বলেছি তাদের জমি হস্তান্তর চলবেনা। আদিবাসী ছেলে মেয়েরা টাকার জন্য পড়াশোনায় বঞ্চিত হবে না। আমি টাকা দেবো তাদের।”
রাজ্যের বিজেপি নেতাদের কটাক্ষ করে তিনি বলেন- “ওরা দিল্লিকে লিখে জানায় বাংলাকে ১০০ দিনের ও বাংলার বাড়ি বানানোর টাকা দেবে না। কেন পৈত্রিক জমিদারির টাকা? এটা তো মানুষের টাকা। এটা বিজেপির টাকা নয়। মানুষের প্রতি বঞ্চনা চলছে। এরকম চলতে থাকলে একদিন আপনাদের বলব তীর ধনুক ধামসা মাদল নিয়ে রাস্তায় প্রতিবাদ করে বলবেন “কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাকে বঞ্চনা করছে কেন কেন্দ্রীয় সরকার জবাব চাই জবাব দাও।”আমি আপনাদের সাথে থাকবো। আমি আপনাদের সংস্কৃতি জানি, তাই আপনাদের প্রত্যেকটা প্রোগ্রাম মন দিয়ে করি। আগামী দিনে আপনাদের এখানে একটা সার্কিট টুরিজম করছি। যেটা ঝাড়গ্রাম থেকে একেবারে বাঁকুড়া পর্যন্ত হবে। জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে চাষের ক্ষেত্রে একটু সমস্যা হয়েছে। সেগুলো রিভিউ করার অর্ডার দিয়েছি। জলের সমস্যা থাকলে বিকল্প কি করা যায় সেদিকে দেখার জন্য বলেছি। ২০২৪ এর মধ্যে সবার বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে যাবে সেটার ব্যবস্থা করছি। আগামী দিনে আরও সব হবে।”
