বৃক্ষ পুজো, বনবিবির থান দর্শন এবং সুন্দরবনের একগুচ্ছ উন্নয়নের উদ্বোধন ও পরিষেবা প্রদান করলেন মুখ্যমন্ত্রী

ইনামুল হক, বসিরহাট: উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের কালিতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের সামশেরনগর বনবিবি মাঠে উন্নয়নের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন, শিলান্যাস ও পরিষেবা প্রদান করলেন মঙ্গলবার। কিন্তু এসব কিছুর মধ্যে পরিষেবা প্রদানের মঞ্চে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সুন্দরবনের বাসিন্দারা ঘরের মায়ের মতই দেখলেন। শুনলেন তার অন্তর ভরা মনের কথা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন তার বক্তব্য শুরু করেন এভাবেই, আমার উদ্দেশ্য ছিল নিজের চোখ দিয়ে দেখে বনবিবি দেবীর মন্দিরে পূজা করবো। প্রকৃতি দেবী এবং বৃক্ষের পূজো করবো। নদীমাতৃক দেশ বাংলা। প্রকৃতির তান্ডব, সাইক্লোন, নদী ভাঙ্গনের পাশাপাশি জলে কুমির, ডাঙ্গায় বাঘ এইসব নিয়ে সুন্দরবনের মানুষ জীবন যাপন করে। খুব কষ্টে আছেন আপনারা। আমি চাই এইসব এলাকা গুলো প্রশাসন চোখ দিয়ে দেখুন। আপনাদের উন্নয়নে তারা সাথী হোন। এরপর তিনি দুয়ারে সরকারের ও খোঁজখবর নেন। হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের কালিতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের ২ নম্বর সামশেরনগর কুঁকড়ে খালি জঙ্গল নদীর পাশে এই বনবিবির থান। সেখানে গিয়ে তিনি বনবিবির পুজো দেন বৃক্ষরোপণ করেন এবং বৃক্ষ পূজা ও করেন। বনবিবির সেবাইত ও উত্তরসুরিকে নতুন সাল গামছা কাপড় ফুল মিষ্টি দিয়ে সংবর্ধনা দেন।
বৃক্ষ পূজার মধ্য দিয়ে সুন্দরবন সফরের সূচনা করেন। তারপর ফের মঞ্চে চলে আসেন সুন্দরবনের দুস্থদের আনা ১৫০০০ শীত বস্ত্র সেইগুলো পর্যাপ্ত না পেয়ে রীতিমতো রাজ্যের মুখ্য সচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলাশাসক শরৎকুমার দ্বিবেদী, হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের বিডিও শাশ্বত প্রকাশ লাহিড়ীকে প্রকাশ্য মঞ্চে ভর্ৎসনা করলেন। পাশাপাশি পুরো শীতবস্ত্র না পেয়ে মঞ্চের উপরে প্রায় ১৭ মিনিট চেয়ারে বসে থাকলেন বক্তব্য না দিয়ে। এই নিয়ে রীতিমতো প্রশাসনিক মহলে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে রিলিফ সেন্টারের মজুদ করা ১০০০ শীত বস্ত্র ফের আবার সাধারণ নাগরিকদের নিজের হাতে প্রদান করলেন। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার পুর্তের কর্মাধ্যক্ষ নারায়ণ গোস্বামী, বসিরহাটের সাংসদ নুসরাত জাহান, সন্দেশখালীর বিধায়ক সুকুমার মাহাতো, শেখ শাহাজান সহ বিশিষ্টজনেরা। এদিন তিনি উপভোক্তাদের হাতে বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান করে বলেন সুন্দরবনের পর্যটনের মান যাতে আরো বাড়ে তার জন্য একটা মাস্টার প্ল্যান তৈরি হচ্ছে। ইতিমধ্যে সুন্দরবনকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে ১৫ কোটি গাছের চারা বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি বনবিবির থানটা এখন কাঁচা রয়েছে। ওটা খুব দ্রুত পাকা করা হবে। এই থানের প্রতিষ্ঠাতার উত্তরসূরী পরান মণ্ডল তিনি দাবি করেছিলেন আমার কাছে। সেই দাবি মেনে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন। এই বনবিবি স্থান পাকা হয়ে গেলে উদ্বোধন করতে আরো একবার সুন্দরবনে আসবো। পাশাপাশি বলেন, যাতে পর্যটন কেন্দ্রগুলো আরো দ্রুত উন্নয়ন ঘটে তার ব্যবস্থা করবেন। যদিও সুন্দরবনবাসীর প্রত্যাশামতো বসিরহাট বা সুন্দরবনকে জেলা করার কোন চূড়ান্ত ঘোষণা এদিন তিনি করেননি।
হিঙ্গলগঞ্জ সফর শেষে হেলিকপ্টারে করে অবশেষে টাকিতে পৌঁছলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ টাকির এরিয়ান ক্লাব মাঠে এসে পৌঁছায় মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার। সেখানে তাকে অভ্যর্থনা জানান বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়, বসিরহাট পৌরসভার পৌর মাতা অদিতি মিত্র সহ একাধিক প্রশাসনিক আধিকারিকরা। সেখান থেকে তিনি গাড়িতে রাজবাড়ি ঘাটে পৌঁছান তিনি। তারপর সেখানে নেমে রাজবাড়ি ঘাটে প্রণাম করেন ও স্থানীয় মহিলাদের সাথে কিছুক্ষণ আলাপচারিতা করেন। সেখান থেকে সোজা চলে যান জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের বাংলোয় এবং আজ সেখানেই রাত্রিবাস করার কথা রয়েছে তার। পুলিশ সূত্রে খবর সন্ধ্যা ছটায় টাকির কুলেশ্বরী কালীবাড়ি ও রামকৃষ্ণ মিশন পরিদর্শনে যাবেন তিনি।