কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আসছে না আর ‘কিষাণ সম্মান’ নিধির টাকা

কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা চালিত প্রধানমন্ত্রী কিষাণ যোজনা কৃষকদের সুবিধার জন্য চালু করা হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকবার এই যোজনা সম্পর্কে সকলের সামনে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কৃষকদের উদ্দেশে ট্যুইট করে জানিয়েছেন, ‘আমাদের কৃষক ভাই-বোনদের জন্য দেশ খুবই গর্বিত। কৃষকরা যত সমৃদ্ধ হবেন, নতুন ভারত তত সমৃদ্ধ হবে। আমি খুবই খুশি কারণ প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি যোজনা এবং কৃষির সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য যোজনা দেশের অসংখ্য কৃষকদের শক্তি জুগিয়ে চলেছে।’

যদিও বাস্তবের ছবিটা অন্য কথা বলছে, উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর দেহহাটের ঘানা খান্দি গ্রামের বাসিন্দা শামীম তার বাবার কাছ থেকে পাওয়া জমি চাষ করেন। তিনি কিষাণ সম্মান নিধি সম্পর্কে বলেন- “প্রায় দেড় বছর হয়ে গেল। কোন কিস্তি আসেনি। জনসেবা কেন্দ্রে গেলে বলা হয়, এ টাকা ঋণে কেটে নেওয়া হচ্ছে।
৬ বছর আগে নিজের জমিতে চাষ করার জন্য ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন শামীম। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে সরকার কৃষকদের ঋণ মকুব করেছিল। এই পর্বে সাহারানপুর জেলাতেও একটি বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এবং কৃষকদের মধ্যে ঋণ মকুবের চেক বিতরণ করা হয়। শামীম বলেন, তার ঋণ মকুব করা হয়নি। কিষাণ সম্মান নিধির কিস্তিও পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষিকাজ করে সংসারের সব খরচ মেটে না। এমনকি শিশুরাও লেখাপড়া করতে পারছে না। ছোট বয়সেই শিশুদের কাজে যেতে হচ্ছে। ফলে কোনরকমে দিন গুজরান করছে এখন শামীম। আবার রিহান নামে এক ব্যক্তি কিষাণ সম্মান নিধি সম্পর্কে বলেন –’আমাদের পরিবারের সবার কাগজ নিয়ে গেলেও আমরা মাত্র দু-তিনজন টাকা পেয়েছি। এবারও আমার কিস্তি আসেনি। অন্যদিকে চৌহরি সিং নামে এক বৃদ্ধ,যিনি খুব কমই মাঠে যান। শরীর আর তেমন চলে না। তাই তিন ছেলের হাতে ক্ষেতের দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন । ফসল বিক্রি করেও সংসার চালাতে পারছেন না। চৌহরি সিং এবং তার স্ত্রী দুজনেই অসুস্থ। কৃষিজমিও দুজনের নামে। জমি সংক্রান্ত যাবতীয় কাজে দুজনকেই যেতে হয়। চৌহরি সিংয়ের ছেলে প্রমোদ জানিয়েছেন, গত প্রায় এক বছর ধরে তাঁর বাবা কিষাণ সম্মান নিধির কিস্তি পাননি। এ বিষয়ে অভিযোগ করলে হিসাব চেক করার কথা বলা হয়। প্রমোদ তার বাবার সাথে ব্যাংকে গিয়েছিল। কেওয়াইসি করাতে বলা হয়েছে। কিন্তু এক বছর হয়ে গেল, টাকা আসেনি।

৬৫ বছর বয়সী নাথালি রাম ধুন্না গ্রামের বাসিন্দা। নাথালি রামও ইউপির সেই কৃষকদের মধ্যে একজন যারা ‘কিষাণ সম্মান নিধি’র কিস্তি আর পান না। তিনি বলেন, মাত্র ৩-৪টি কিস্তি পেয়েছেন। এখন তিনি সরকারের কাছ থেকে কোনো টাকা পান না। নাথালি রামের ২০ বিঘা জমি আছে। ফসল থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে না। তাই নাথালি রাম ও তার বড় ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজ করে। ছোট ছেলেও পিভিসি প্যানেলের কাজ শুরু করেছে।ঘানা খান্দি গ্রামের আরেক কৃষক তাহির হাসানের মোবাইলে মেসেজ আসে। ছেলে যখন পড়ে, তখন জানতে পারে প্রধানমন্ত্রী কিষাণ যোজনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২০০০ টাকা এসেছে। কয়েকদিন পর তাহির ব্যাংকে গিয়ে টাকা তুলে নেন। কিন্তু তারপর আর স্কিমের নামে কোনও টাকা আসেনি।

এই সমস্ত কৃষকরা সরকারের প্রতিশ্রুতিতে কিষান সম্মান নিধি -র অর্থের জন্য অপেক্ষা করছেন। এই অবস্থা শুধু সাহারানপুর বা পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের কৃষকদের নয়, সারা দেশের কোটি কোটি কৃষকের এই অবস্থা। ‘দ্য হিন্দু’-এর খবর অনুযায়ী, গত তিন বছরে কিষান সম্মান নিধি-র সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৬৭% হ্রাস পেয়েছে।