নিজস্ব প্রতিনিধি: বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধন সহ একাধিক প্রকল্পের সূচনা করতে আজ শুক্রবার কয়েক ঘন্টার জন্য ঝটিকা সফরে কলকাতায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে কার্যত বাংলার লক্ষ্মীলাভ ঘটতে চলেছে। সাত হাজার ৮০০ কোটিরও বেশি টাকার একাধিক প্রকল্প পেতে চলেছে রাজ্যবাসী। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা অবশ্য মনে করছেন, পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্যে সাত হাজার ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্পের সূচনা করে কার্যত পঞ্চায়েত নির্বাচনে পদ্ম শিবিরকে রাজনৈতিক ডিভিডেন্ড ঘরে তোলার সুবর্ণ সুযোগ করে দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একাধিক অনুষ্ঠানে হাজির থাকলেও দুজনের মধ্যে আলাদা করে বৈঠক হবে কিনা, তা বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত নিশ্চিত নয়। তবে আমন্ত্রণ পেলেও প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে হাজির থাকছেন না বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর পরিবর্তে হাজির থাকছেন উপমুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার।
প্রধানমন্ত্রীর আজকের সফরসূচি যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে তাতে জানা যাচ্ছে, সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বায়ুসেনার বিশেষ বিমানে কলকাতা বিমানবন্দরে নামবেন মোদি। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে স্বাগত জানাবেন কলকাতার মহানাগরিক তথা রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। দমদম বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে চেপে সোজা রেসকোর্সের হেলিপ্যাডে নামবেন। সেখান থেকে সড়কপথে পৌঁছবেন হাওড়া স্টেশনে। সোয়া ১১টা নাগাদ বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের যাত্রা শুরুর সঙ্কেত দেওয়ার পাশাপাশি জোকা থেকে তারাতলা মেট্রো রেল। এই খাতে খরচ ২ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। নবরূপে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন তৈরির জন্য ৩৩৫ কোটি টাকার প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। ফালাকাটা থেকে গুমানিহাট স্টেশনের মধ্যে ডাবল রেললাইন পাতার কাজের সূচনাও করার কথা প্রধানমন্ত্রীর। ওই কাজের জন্য বরাদ্দ করা হচ্ছে ১ হাজার ৮০ কোটি টাকা। এছাড়াও হুগলি ও উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন শহরের জন্য ৯৯০ কোটি টাকার নিকাশি প্রকল্প ও এক হাজার ৫৮৫ কোটি টাকার স্বচ্ছ গঙ্গা মিশনেরও সূচনা করবেন। রাজ্যের নিকাশি ব্যবস্থার পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ২ হাজার ৫৫০ কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন করার কথা। প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়ে উদ্বোধন হবে জোকার ‘ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন’-এর। এই প্রকল্পে খরচ হবে ১০০ কোটি টাকা।
হাওড়া স্টেশনের অনুষ্ঠান শেষে সড়ক পথে নৌবাহিনীর আইএনএস নেতাজি সুভাষে পৌঁছবেন। নেতাজির মূর্তিতে মাল্যদান করবেন প্রধানমন্ত্রী। মাল্যদান শেষে একটি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন। প্রদর্শনী ঘুরেও দেখবেন। ১২টা ২৫ মিনিটে যোগ দেবেন জাতীয় গঙ্গা পরিষদের বৈঠকে। ওই বৈঠকে থাকবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, ঝারখণ্ডের মুক্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব। উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াতও। গঙ্গার দূষণ রোখার পাশাপাশি ভাঙন রোধ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। গঙ্গা নদীকে ব্যবহার করে কীভাবে পর্যটনের প্রসার ঘটানো যায় তা নিয়েও বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মতামত জানতে চাইবেন মোদি। কলকাতা থেকে বারাণসীর মধ্যে যাত্রীবাহী জাহাজ চালানোর বিষয়টিও আলোচনায় উঠবেন। বৈঠক শেষে মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নিয়ে আইএন্স নেতাজি সুভাষ ছেড়ে রেসকোর্সের হেলিপ্যাডের উদ্দেশে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে দমদম বিমানবন্দর হয়ে বেলা তিনটে ২০ নাগাদ দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেবেন। যদিও শেষ মুহুর্তে সফরের সময়ে কিছুটা রদবদল ঘটতে পারে।
নবান্ন সূত্রের খবর, জাতীয় গঙ্গা পরিষদের বৈঠকে মালদা-মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ার গঙ্গা ভাঙন নিয়ে সরব হবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফরাক্কা বাঁধ কর্তৃপক্ষের গয়ংগচ্ছ মনোভাব নিয়ে ফের একবার প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। তবে ঠাসা কর্মসূচির ফাঁকে বাংলার মুক্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কোনও একান্ত বৈঠক করেন কিনা, সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
