আটলান্টিক মহাসাগরে বিলীন হয়ে গেলেন আরান্তিস দো ন্যাসিমেন্টো এডসন পেলে। বিশ্ব ফুটবল যাঁকে দীর্ঘ আট দশক চিনে এসেছে শুধু ‘পেলে’ (Pele) নামে। ফুটবল সম্রাটের জীবন থামল শুক্রবার ভারতীয় সময়ে রাত ১২টা নাগাদ। ব্রাজিলের স্থানীয় সময়ে বিকেল সাড়ে তিনটা। ৮২ বছরে থামলেন জীবনের মাঠে। রেখে গেলেন বহু কীর্তিমালা, বহু ঘটনার সমারোহ, যা আগামী ফুটবল ইতিহাসকেও সমান আলোকিত ও উজ্জ্বল করে রাখবে। তিনি সাও পাওলোর অ্যালবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। টানা ২৯ দিন পর লড়াই থামল ‘কালো মাণিক’-এর। চিকিৎসকরা বলেই দিয়েছিলেন তাঁর ক্যান্সার একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে গিয়েছে। কোনও চিকিৎসাই কাজ দিচ্ছিল না। কাতারে বিশ্বকাপের মধ্যবর্তী সময়েই শোনা গিয়েছিল পেলে একেবারেই ভাল নেই। কিন্তু তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে এতটাই গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়েছে যে, সারা বিশ্বে তাঁর অগণিত ভক্তরাও ধোঁয়াশায় ছিলেন। মেয়ে কেলি যেদিন হাসপাতালে বাবার শয্যার পাশে ছিলেন সেদিনই বোঝা গিয়েছিল, পেলে একেবারেই ভাল নেই। দেখা গিয়েছে অশক্ত শরীরে মেয়েকে আঁকড়ে রয়েছেন কিংবদন্তি। শুধু তাই নয়, তাঁর নাতনিকে দেখা গিয়েছিল হাসপাতালেই পেলের কেবিনের বেডে শুয়ে রয়েছেন।
পরিবারের সদস্যরা বুঝে গিয়েছিলেন, পেলেকে আর কোনও চিকিৎসাতেই ফিরিয়ে আনা যাবে না। যদিও চিকিৎসকরা চেষ্টা করেছিলেন শেষ পর্যন্ত । কিন্তু প্রথমত ক্যানসার, আর দ্বিতীয়ত, বার্ধক্য তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে গেল। মাঠে বল পায়ে তাঁর আক্রমণ বিপক্ষের ডিফেন্সে কাঁপন ধরাতো, কিন্তু জীবনের শেষ কটা বছর মারণরোগের মোকাবিলায় তিনি রক্ষণাত্মক হয়ে পড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। কোলন ক্যানসারের জন্য বারবার তিনি কেমোথেরাপি নিয়েছেন। তাতে শরীর আরও দূর্বল হয়ে পড়েছিল। প্রয়াত ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলে। ৮২ বছর বয়সে ইহলোকে পাড়ি জমালেন ফুটবল সম্রাট। বহুদিন ধরেই তিনি ক্যানসারে ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন পেলে। রেখে গেলেন বহু ইতিহাস, বহু রুপকথার গল্প আর একাধিক কীর্তি মালা। ২০২০ সালে ফুটবলের রাজপুত্রের পর এবার ফুটবল সম্রাট। এই শোক কাটিয়ে উঠবে কী করে ফুটবলবিশ্ব!
কাতারে বিশ্বকাপ চলাকালীনই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন পেলে। আচমক শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাখা হয়েছিল প্যালিয়েটিভ কেয়ার ইউনিটে। কিংবদন্তির এহেন খবরে মন খারাপ হয় বিশ্বের অগণিত ভক্তের। এরপর আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে ওঠেন ফুটবল সম্রাট। কাতার বিশ্বকাপ হাসপাতালে থেকেই দেখেছেন পেলে। নেইমার তাঁর গোলের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলার পর শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের পর ইনস্টাগ্রামে পেলে লিখেছিলেন, “অভিনন্দন আর্জেন্টিনা। দিয়েগো এখন হয়তো হাসছে।” সেই দিয়েগোর কাছেই পাড়ি দিলেন ফুটবল সম্রাট।
১৯৫৮ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে ব্রাজিলের হয়ে প্রথম বিশ্বকাপ খেলেন পেলে। এরপর পরপর চারবার বিশ্বকাপ খেলে তিনবার চ্যাম্পিয়ন। তিনটি বিশ্বকাপ জয়ের নজির নেই বিশ্বের আর কোন ফুটবলারের। ফুটবলে পেলে মানে এক অনন্য ইতিহাস। পেলে মানে এক অধ্যায়। যার জন্মটা হয়েছিল ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর। যার আসল নাম এডসন আরান্তেস ডি নাসিমেন্তো। এই নামে বিশ্ব তাঁকে চেনেনি। চিনেছে পেলে নামে। ফুটবল সম্রাট নামে যার কাছে মাথা নোয়াতে হয়। স্যান্টস ও নিউইয়র্ক কসমস ও ব্রাজিল দলে সর্বদা আলো ছড়িয়েছেন। সেই পেলে কিনা ফুটবলকে ছেড়ে পাড়ি দিলেন অন্য কোন দেশে!
পরিবারের সঙ্গে হাসপাতালেই কাটিয়েছেন ক্রিসমাস। মেয়ে কেলি নাসিমেন্তোর একটি পোস্ট করা ছবি দেখেই বোঝা যায় ভালো নেই ফুটবলের সম্রাট। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজে বসে আছেন। চিকিৎসকরাও জানিয়ে দিয়েছিলেন পেলের ক্যান্সার শেষ পর্যায়ে। ফুটবল জীবনে যাকে চোট-আঘাত কোনদিন কাবু করতে পারেনি। সেই পেলে টানা ২৯ দিন লড়াইয়ের পর হার মানলেন মারণ রোগের কাছে। চিরঘুমের দেশে পাড়ি জমালেন কিংবদন্তি। স্বর্গ বলে যদি কিছু থাকে তবে এবার সেখানে আসর বসবে ফুটবলের।