বাংলার বইমেলা দিল্লিতে নিয়ে যেতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আমাদের বইমেলা করা উচিত। এমনটাই চান এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার সল্টলেকের করুণাময়ী ‘বইমেলা প্রাঙ্গনে’ এসবিআই মূল অডিটোরিয়ামে এবছরের ৪৬ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার উদ্বোধন হয়। নির্ধারিত রীতি মেনে এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে বইমেলার ৪৬তম বর্ষে ৪৬ টি ঘন্টা বেজে বইমেলার সূচনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ওই ‘পুস্তক পার্বণ উৎসব’-এর উদ্বোধনী মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলার বইমেলা দিল্লিতে হবে। রাজ্যের প্রতিটি জেলা তাতে অংশ নেবে। সেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যোগদান করবে’। এখানেই থেমে না থেকে ‘প্রস্তাবিত’ দিল্লির বইমেলায় যাতে অন্যান্য দেশকে আমন্ত্রণ করা হয়। সে ব্যাপারে বইমেলার আয়োজন সংস্থা পাবলিশার্স এন্ড বুক সেলারস গিল্ড কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতা বইমেলা যে আক্ষরিক অর্থেই আন্তর্জাতিক বইমেলা। বক্তব্যে সে কথা তুলে ধরে ‘ঐতিহ্যবাহী’ বাংলার বইমেলাকে রাজধানী শহর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য খোদ মুখ্যমন্ত্রী নিজেই যাবতীয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে কলকাতা বইমেলা মঞ্চ থেকে গিল্ড কর্তৃপক্ষকে আশ্বাস জুগিয়েছেন তিনি।
এদিন পুস্তক পার্বণ উদ্বোধনী মঞ্চেও মুখ্যমন্ত্রীর নিশানায় ছিল বিরোধীরা। তিনিও যে সমালোচনার উর্ধ্বে নন। তার যথার্থ উত্তরদিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, ‘কোন সমালোচনা থেকে যদি কিছু শিখতে পারি, তাহলে তার থেকে ভালো কিছু হয় না। সমালোচনা থেকে রোজই কিছু শিখি’। রাজনৈতিক লোকেরা কি বই লিখতে পারবেনা? এ প্রশ্ন উস্কে মমতার জবাব, ‘উইপোকা কামড়ালে তা দেখানো হয়। কিন্তু একজন ভালো বই লিখলে তা দেখানো হয়না। ভালো গান লিখলে তার পর্যালোচনা হয় না। রাজনৈতিক লোকেরা কি বই লিখতে পারে না! রাজনৈতিক লোকেরা আগে সামাজিক জীব হিসাবে নিজেকে তুলে ধরলে তবেই সে সমাজ সংস্কারক হয়’। যথার্থ উদাহরণ হিসেবে মনীষীদের জীবনী তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজা রামমোহন রায়ের সময়ে রাজনৈতিক দল সেভাবে ছিল না। তিনি তো সমাজ সংস্কারক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’ আজও আমরা বুকে নিয়ে ঘুরি। নেতাজির ‘তরুণের স্বপ্ন’ খুঁজে বেড়ায়। রবীন্দ্রনাথের ‘গীতবিতান’ খুঁজে বেড়ায়। নজরুলের লেখা এবং তাঁর বাউল, লোকগীতি, বাউলগীতি, কাওয়ালী গানের সুর রয়েছে। বইমেলার এই কটাদিন সমস্ত মনীষী ও শিল্পীদের শিল্পকলা ফুটে উঠবে। ছাত্র-যৌবনদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, কম্পিউটার, ইন্টারনেটে পড়াশুনার পাশাপাশি বইমেলার বাস্তবে ধুলো। একটু মাটির স্বাদ। একটু কলমের স্বাদ যদি পেতে চান তাহলে বইমেলায় আসবেন। এদিন বইমেলার উদ্বোধন মঞ্চে সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়কে বিশেষ সম্মান প্রদান করেন মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে, বইমেলায় দর্শকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে পরিবহন ব্যবস্থাকে মজবুত করতে উপস্থিত পরিবহন মন্ত্রীকে নজর দেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।

সোমবার উদ্বোধনের পর বইপ্রেমীরা অনেকেই মেলায় কেনাকাটা শুরু করেছে। তা চলবে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। দেশের বিভিন্ন রাজ্য তো বটেই, সেইসঙ্গে আমেরিকা, ফ্রান্স, ইতালি, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড সহ মোট ২০ দেশ বইমেলায় অংশ নিয়েছে। ছোট-বড় মাঝারি মিলিয়ে থাকছে ৯৫০ টি স্টল। এবারে উল্লেখযোগ্য ভাবে স্থান হয়েছে ছোট প্রকাশকদের। এবারে বইমেলার থিম কান্ট্রি স্পেন। এদিন উদ্বোধনী মঞ্চে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্পেনের সংস্কৃতি মন্ত্রকের প্রতিনিধি মারিয়া খোসে গালবেজ সালভদর, দুই গিল্ড কর্তা ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়, সুধাংশুশেখর দে। শিল্পী শুভা প্রসন্ন। মন্ত্রীদের মধ্যে ছিলেন অরূপ বিশ্বাস, শোভন দেব চট্টোপাধ্যায়, সুজিত বসু, স্নেহাশীষ চক্রবর্তী, বাবুল সুপ্রিয়, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী, ইন্দ্রনীল সেন, মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী প্রমুখ।