নিজস্ব প্রতিবেদক: বীরভূমের মাটিতে দাঁড়িয়েই বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, ‘দেউচা পাচামির প্রকল্পের জন্য জোর করে কোনও সাধারণ মানুষের জমি নেওয়া হবে না। যারা স্বেচ্ছায় জমি দেবেন, তাদের জমিই শুধু নেওয়া হবে।’ পাশাপাশি কেন্দ্রের কাছ থেকে রাজ্যের বকেয়া পাওনা নিয়েও ক্ষোভ চড়িয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে কেন্দ্রের বাজেটকে ‘অমাবস্যার অন্ধকার’ বলে কটাক্ষ করেছেন। রাজ্যে জোর করে এনআরসি ও সিএএ কার্যকর করতে দেওয়া হবে না বলেই হুঙ্কার ছেড়েছেন তিনি।
এদিনের সভায় ৫৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০৮টি প্রকল্প উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। দেউচা পাঁচামি কয়লা খনি প্রকল্পের জন্য যারা জমি দিয়েছেন তাদের ৮৭৯ জনের হাতে সরকারি চাকরির নিয়োগপত্রও তুলে দেওয়া হয়। বীরভূমের সঙ্গে যে তাঁর শিকড়ের টান রূএছে তা উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘আমি বীরভূমে জন্মেছি। এই মাটি আমার খুব চেনা মাটি। এই লাল মাটি আমার খুব প্রিয়। ময়ূরাক্ষী নদীর উপর লাভপুরের সেতুর নাম তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় সেতু রেখেছি। আর নলহাটি তে নবনির্মিত সেতুর নাম হবে নলাটেশ্বরী সেতু।’
কেন্দ্রকে নিশানা
এদিন ফের কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়ান মমতা। তাঁর কথায়, ‘কেন্দ্র একশো দিনের কাজের টাকা সহ, নানা বকেয়া পাওনা আটকে রেখেছে। একশো দিনের কাজের ৭ হাজার কোটি টাকা পাব। কান্দির মাস্টার প্ল্যানের কথা বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। এটা হলে বীরভূম-মুর্শিদাবাদের মানুষ বাঁচবে।’ কথায় কথায় রাজ্যে কেন্দ্রীয় দল পাঠানো নিয়ে কটাক্ষের সুরে মমতা বলেন, ‘এখানে উইপোকা কামড়ালে কেন্দ্রীয় দল পাঠাও। আর ডাকাত গদ্দারদের বিরুদ্ধে কোনও হস্তক্ষেপ হয়না। আমি আগে এমন সরকার দেখিনি। সরাসরি জেলাশাসকদের নিয়ে বৈঠক করছে। সবাইকে আইটি, ইডি, সিবিআই পাঠাচ্ছে। কাল সারা দেশে রেড করেছে? কেন টাকা নেই? লোকের ঘরে ঢুকে পকেটমারি করতে গিয়েছে?’
দেউচায় কয়লা খনি প্রকল্পে জোর করে জমি নয়
দেউচায় এশিয়ার বৃহত্তম কয়লা খনি প্রকল্পে জোর করে জমি কেড়ে নেওয়া হবে না বলেও এদিন আশ্বস্ত করেছেন মুক্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘আমি কৃষকদের জন্য সিঙ্গুরে আন্দোলন করেছিলাম। আগেও বলেছি, এখনও বলছি, কারও কাছ থেকে জোর করে জমি কেড়ে নেব না। অধিকাংশ জমির জন্য সম্মতি পাওয়া গিয়েছে। দেউচা পাঁচামিতে যারা জমি দেবেন তাঁরা কেউ বঞ্চিত হবেন না’
বঙ্গ বিজেপিকেও নিশানা
নাম না করে এদিন বঙ্গ বিজেপিকে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী। আক্রমণ করে বলেন, ‘আমরা চাকরি দিতে চাইছি। কিন্তু আদালতে গিয়ে আটকে দেওয়া হচ্ছে। আমি আদালতের কোনও দোষ দেখিনা। দোষ হল আসলে সেই রাজনৈতিক দল গুলির যারা মানুষকে চাকরি পেতে দেয় না। শুনলে হাঁসি পায় ডাকাত গদ্দাররা মানুষ খেপায় বিজেপি তুমি চাকরি বন্ধ করছ কেন?’
বিশ্বভারতী প্রসঙ্গে
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের শান্তিনিকেতনের জমি নিয়ে বিশ্বভারতীর উপাচার্যের মন্তব্যে আগেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন তিনি জানান, কবিগুরুর স্বপ্নের বিশ্বভারতী যা ঘটছে তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি পাঠাবেন। তাঁর কথায়, ‘বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের গর্ব। কিন্তু এখানে যা ঘটছে তা দুঃখের। কাউকে সাসপেন্ড করছে, কাউকে নির্বাসিত করছে। এমনকী সুপ্রিয় ঠাকুরের বাড়ির সামনে পাঁচিল তুলে দিয়েছে। বিশ্বভারতী ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী কে চিঠি লিখব।’
অন্ধকারের বাজেট
এদিনই সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থ বর্ষের জন্য আর্থিক বাজেট পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। ওই বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাজেট ভাঁওতা ছাড়া আর কিছু নয়। বাজেটের নামে দরিদ্ররা হয়েছে বঞ্চিত। ৩.৭ কোটি বেকার রয়েছে। কর্মসংস্থানের কোনও দিশা দেখানো হয়নি। এই বাজেটে কোনও আলো নেই। শুধু রয়েছে অমাবস্যার অন্ধকার। আগেই ১০০ দিনের কাজের টাকা কমিয়ে দিয়েছিল। এই অর্থ বর্ষে নির্দয়ভাবে বরাদ্দ ছাঁটা হয়েছে। খাদ্যে ভর্তুকি কমিয়ে দিয়েছে। ফলে গরীব মানুষ আগামী দিনে খাবার পাবে না। আমরা বিনা পয়সায় রশন দিই। ওরা সব বন্ধ করে দিচ্ছে। বন্ধ করতে করতে একদিন নিজেরাই বন্ধ হয়ে যাবে। ওরা যে বাজেট করেছে তা আমায় করতে দিকে আধ ঘণ্টায় করে দিয়ে দেখতাম যে গরীব মানুষের জন্য কী ভাবে বাজেট করা যায়। নির্বাচনকে নজরে রেখে এই বাজেট। বিজেপির হাতে আর মাত্র কয়েকটি মাস আছে। মানুষের উপর অত্যাচারের জবাব মানুষ দেবে। আর কিছু মাস পরেই এপাশ ওপাশ ধপাস।’
অনুব্রতহীন বীড়ভুমের দায়িত্ব নিজেই নিলেন
গরু পাচার কাণ্ডে বর্তমানে জেলে রয়েছেন বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। আর তাতেই আনন্দে আহ্লাদে আটখানা বিজেপি-সিপিএম সহ বিরোধীরা। এদিন বিরোধীরা পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে মমতা জানিয়ে দিয়েছেন, ‘অনুব্রতহীন বীরভূমের গড় তিনিই সামলাবেন।’ এ প্রসঙ্গে হুঙ্কার ছেড়ে তিনি বলেছেন, ‘চ্যালেঞ্জ নিলাম বীরভূম আমি নিজে দেখব। আমার ২-১ জন নেতাকে জেলে ভরেছে। তাতে কিছুই হবে না। ইলেকশনের সময়ে তো বাড়ি থেকে বের হতে দিত না। নজরবন্দি করে রাখত। যতদিন সে অ্যাবসেন্ট থাকবে বীরভূম আমি নিজে দেখব। আমাকে সাহায্য করবেন ফিরহাদ হাকিম। কোর গ্রুপ তো রয়েছেই। একটা প্রবাদ আছে না রাজা যায় বাজার। কুত্তা ভোকে হাজার। তৃণমূলে রাজা মানে প্রজা। প্রজার দল।
