সিএএ নিয়ে টালবাহানায় বিমুখ মতুয়ারা, ভোটের ঘাটতি পূরণে আচমকা সংখ্যালঘু প্রেম বঙ্গ বিজেপির!

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিধানসভা ভোটে মুসলিমদের জেহাদি আখ্যা দিয়ে কট্টর হিন্দুত্ববাদী সাজার চেষ্টা করেছিলেন বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোটের দরকার নেই বলে সওষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন পদ্ম নেতারা। এমনকী রাজ্য সভাপতি হয়েই দলের সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি পদ থেকে মুসলিম সম্প্রদায়ের আলি হোসেন মণ্ডলকেও সরিয়ে দিয়েছিলেন বঙ্গ বিজেপির মুখিয়া সুকান্ত মজুমদার। ১০৮ সদস্য বিশিষ্ট দলের রাজ্য কর্মসমিতিতে মুসলিম মুখ হিসেবে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে মাত্র একজনকে। আর ৪৮ জনের বিশেষ আমন্ত্রিত তালিকাতে রয়েছেন একজন। অথচ গত কয়েকদিন ধরে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে সংখ্যালঘুদের মনজয়ে নেমে পড়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী থেকে শুরু করে মিঠুন চক্রবর্তী, দিলীপ ঘোষরা। আর তাতেই প্রশ্ন উঠেছে, আচমকাই কীভাবে ‘জেহাদি’ মুসলিমরা বিজেপির কাছে মূল্যবান সম্পদ হয়ে উঠলেন?
বঙ্গ বিজেপি সূত্রে খবর, দলের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে উঠে এসেছে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কার্যকর করা নিয়ে মোদি সরকারের টালবাহানায় ক্ষুব্ধ মতুয়া সম্প্রদায়। লোকসভা ভোটে যে মতুয়া সম্প্রদায় দু’হাত ভরে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন, বিধানসভা ভোটে তাঁদের একাংশ ফের তৃণমূলকে সমর্থন জানিয়েছেন। লোকসভা ভোটের আগে সিএএ কার্যকর না হলে পুরোপুরি বিমুখ হতে পারে মতুয়া সম্প্রদায়। আর বাংলাদেশ থেকে আসা উদ্বাস্তুদের একাংশ সরে গেলে ভোট শতাংশে যে ঘাটতি হবে তা পূরণেই মুসলিম ভোটের দিকে ঝাঁপানো হয়েছে।
শুক্রবারও বিজেপির তারকা প্রচারক মিঠুন চক্রবর্তী ও দিলীপ ঘোষের মুখে সংখ্যালঘু বন্দনা শোনা গিয়েছে। বিজেপি যে মুসলিম বিরোধী দল নয়, তা বোঝানোর মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছেন দুজনেই। ডিস্কো ড্যান্সার খ্যাত তারকার কথায়, ‘বিজেপি কোনওদিনই মুসলিম বিরোধী নয়, আমি চাই আমার মুসলিম ভাইবোনেরা ভাল থাকুক। একটা প্রচার চালানো হয়েছে, বিজেপি মানেই সংখ্যালঘু বিরোধী। এটাকে বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিজেপি মুসলিম বিরোধী নয়। বাংলার ‘হিন্দুস্থানি মুসলিম’দের কথা আমরা ভাবি। আমি চাই আমার পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান ভাইবোনরা ভাল থাকুক।’ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, হিন্দুস্তানি মুসলিম বলতে এদেশের প্রাচীন বাসিন্দা বাঙালি ও অবাঙালি মুসলিমদের বোঝাতে চেয়েছেন নব্য বিজেপি নেতা। বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলিমদের নয়। অর্থা‍ৎ মুসলিমদের মধ্যেও আমরা-ওরা ভাগ করতে চেয়েছেন নকশাল-সিপিএম-তৃণমূল হয়ে বিজেপিতে টিঁকি বাঁধা বলিউড অভিনেতা।
প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ আবার এক ধাপ এগিয়ে মুসলিম দরদী সাজতে ঘটা করে হজযাত্রীদের সঙ্গে সেলফি তুলেছেন। রাজ্যের সংখ্যালঘুরা স্বাধীনতার পর থেকে বঞ্চিত বলে উল্লেখ করে দুঃখিত কণ্ঠে বলেছেন, ‘এ রাজ্যে ৩০ শতাংশ মানুষ সংখ্যালঘু। ভেবে দেখার বিষয়, স্বাধীনতার ৭৫ বছরে তারা কী পেয়েছেন? এই ৩০ শতাংশ মানুষ যদি পিছিয়ে থাকে, রাজ্য এগোবে কীভাবে? শিক্ষা-স্বাস্থ্য থেকে এতদিন ওদের বঞ্চিত করা হয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে হাতে বোমা, বন্দুক তুলে দেওয়া হয়েছে। ওদের এবার ভাবতে হবে, তাঁরা মোদির সঙ্গে থেকে সুবিধা পাবেন, না দিদির সঙ্গে থেকে আজীবন গরীব হয়ে জীবন যাপন করবেন।’
বঙ্গ বিজেপি নেতারা যখন সংখ্যালঘু তোষণে কোমর কষে ঝাঁপিয়েছেন, তখন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বাজেটে সংখ্যালঘু উন্নয়ন বাজেট এক ধাক্কায় প্রায় ৩৮ শতাংশ কমিয়েছেন। গত বছর যেখানে সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রকের বাজেট ছিল ৫ হাজার ২০ কোটি টাকা। সেখানে আগামী অর্থবর্ষে তা কমিয়ে করা হচ্ছে ৩,০৯৭.৬০ কোটি টাকা। মাদ্রাসা শিক্ষা ক্ষেত্রে বাজেট ১৬০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে মাত্র ১০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মুখে সংখ্যালঘু প্রেমের কথা বললেও বিজেপি যে আসলে মনেপ্রাণে সংখ্যালঘু বিরোধী তা কেন্দ্রীয় বাজেটেই প্রমাণিত।’