তলবের নামে গ্রেপ্তারি নয়, নওশাদ সিদ্দিকী ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী কে ভার্চুয়াল জেরার অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট।এর পাশাপাশি কোন নথি তদন্তের ক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়লে,তার জন্য তিন দিন আগে পুলিশ কে নোটিশ করতে হবে। গ্রেপ্তারের জন্য অবশ্যই আদালতের অনুমতি প্রয়োজন। অর্থাৎ পুলিশ আদালত কে এড়িয়ে কোনভাবেই গ্রেপ্তার করতে পারবেনা।শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের এজলাসে এই আদেশনামা জারি করা হয়েছে। আইএসএফ নেতা নওসাদ সিদ্দিকীর ‘ঘনিষ্ঠ’ শেখ শামসুরের বিরুদ্ধে এখনই পুলিশ কোনও কড়া পদক্ষেপ নিতে পারবে না, জানাল কলকাতা হাইকোর্ট। নওসাদের সঙ্গে নাম জড়িয়ে গিয়েছে শামসুরের। কলকাতা পুলিশের দাবি , -‘ভাঙরের বিধায়কের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট ঘেঁটে সামনে এসেছে কিছু বিস্ফোরক তথ্য।যা খতিয়ে দেখতেই ডেকে চেন্নাই থেকে ডেকে পাঠানো হয় শামসুরকে’। এহেন পরিস্থিতি লালবাজারের তলবের পরেই গ্রেফতারির আশঙ্কা করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন চেন্নাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী শামসুর। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার বেঞ্চে এই মামলার শুনানি চলে । সেই শুনানিতে শামসুরের পক্ষের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এজলাসে জানান, -‘ তাঁর মক্কেল একজন ব্যবসায়ী। তাঁর সঙ্গে অনেকের যোগাযোগ থাকতে পারে। নওসাদের ফোনে তাঁর নাম পেয়েই শামসুরের চেন্নাইয়ের বাড়িতে তল্লাশি চালায় কলকাতা পুলিশ। তারপরই ডেকে পাঠানো হয়’।রাজ্যের তরফে এজি আদালতে জানান, -‘নওশাদের বিরুদ্ধে যে এফআইআর দায়ের হয়েছে তাতে দু’জনের নাম আছে। সেই দু’জনের জবানবন্দিতেই মামলাকারীর নাম উঠে এসেছে। তাই পুলিশ তাঁকে সামনাসামনি জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়’।যা শুনে এদিন হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ জানতে চায়, -‘ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কেন জেরা সম্ভব নয়?’ এর প্রতুত্তরে এজি জানান, -‘ যদি কোনও নথির প্রয়োজন হয়, তবে তা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেওয়া অসম্ভব’।যদিও রাজ্যের আবেদন খারিজ করে দিয়ে বিচারপতি মান্থার জানান, -‘ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেই হাজিরা দেবেন আবেদনকারী। যদি পুলিশের কোনও নথির প্রয়োজন হয় তবে ৭২ ঘণ্টা আগে সেটা নোটিস দিয়ে জানতে হবে’। শুধু তাই নয়, হাইকোর্ট আরও জানিয়েছে , -‘ যদি পুলিশ মনে করে আবেদনকারীকে হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন তবে আদালতে পুলিশকে আবেদন করতে হবে’। উল্লেখ্য , কলকাতা পুলিশ বিধায়ক নওশাদের ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে। পুলিশের দাবি, নওশাদের সঙ্গে তাঁর বন্ধু শামসুরের দীর্ঘ চ্যাট পেয়েছে তারা। নওসাদের অ্যাকাউন্টে ওই ব্যক্তি বড় অঙ্কের টাকাও দিয়েছিলেন’। একুশের ভোটের আগে এই টাকাপয়সা লেনদেন হয়েছিল বলেও পুলিশ দাবি করছে।এই লেনদেনের কারণ জানতেই চেন্নাই গিয়েছিল কলকাতা পুলিশের একটি দল। তারপর শামসুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য লালবাজারে ডেকে পাঠানো হয়। শামসুরের দাবি, -‘নওসাদের সঙ্গে তাঁকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে’। উল্লেখ্য, গত জানুয়ারি মাসে আইএসএফের প্রতিষ্ঠা দিবসে কলকাতার ধর্মতলায় অবস্থান বিক্ষোভ করেন দলের নেতা ও কর্মীরা । সেই কর্মসূচি ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ধর্মতলা চত্বর । তার জেরে গ্রেফতার হন নৌশাদ । এখনও মুক্তি পাননি তিনি । এদিকে, তাঁর কাছে থেকে দু’টি স্মার্ট ফোন বাজেয়াপ্ত করে কলকাতা পুলিশ । সেই ফোন ঘেঁটে শেখ শামসুর আলমের নাম পায় তাঁরা । শামসুর চেন্নাইয়ের বাসিন্দা । সেখানেই তিনি রত্নের ব্যবসা করেন । নৌশাদকে গ্রেফতার সংক্রান্ত মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কলকাতা পুলিশের তরফে তাঁকে নোটিশ পাঠানো হয় । কিন্তু, শামসুর তাতে সাড়া না দেওয়ায় তাঁর চেন্নাইয়ের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালায় কলকাতা পুলিশ ।এহেন প্রেক্ষাপটে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা রুজু করেন শামসুর । তাঁর দাবি – ‘ নৌশাদ তাঁর বন্ধু এবং তিনি নিজে একজন ব্যবসায়ী’ । নৌশাদকে কলকাতায় রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে । সেই ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই বলেও দাবি করেছেন শামসুর । তাঁর প্রশ্ন, কেন তাঁকে এভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে ? তাই ঘটনায় অব্যাহতি চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন শামসুর আলম ।শুক্রবার মামলার শুনানি চলাকালীন শামসুর আলমের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘শেখ শামসুর আলম আইএসএফ বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকীর বন্ধু । নৌশাদের মোবাইলে তাঁর নাম পায় পুলিশ । তিনি একজন ব্যবসায়ী । তাঁর সঙ্গে অনেকেরই যোগাযোগ থাকতে পারে । নৌশাদকে গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে কলকাতায় । কলকাতাতেই রাজনৈতিক বিক্ষোভ হয়েছিল । তাতে নৌশাদ গ্রেফতার হন ।’ মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জনের সওয়ালের জবাবে রাজ্যের এজি বলেন, “এফআইআরে নাম থাকা দুই ব্যক্তির জবানবন্দিতে এই মামলার আবেদনকারী শেখ শামসুর আলমের নাম উঠে এসেছে । তাই তাঁকে সামনাসামনি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার । কারণ, এক্ষেত্রে বিভিন্ন নথির প্রয়োজন হতে পারে । সেই নথি হাতে হাতে খতিয়ে দেখা দরকার ।”উল্লেখ্য, নৌশাদের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় একাধিক মামলা রুজু করা হয়েছে । সেই মামলাগুলির শুনানি চলছে ব্যাঙ্কশাল ও বারুইপুর আদালতে । তার মধ্যে একটি মামলায় চার্জশিটও জমা পড়ে গিয়েছে । সেই একই ঘটনায় এবার নৌশাদ সিদ্দিকীর বন্ধু শামসুরকে সাক্ষী হিসাবে সামনাসামনি জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছে কলকাতা পুলিশ ।কলকাতা পুলিশের তথ্য জানার পর বিচারপতি মান্থার বলেন, “পুলিশকে যদি জিজ্ঞাসাবাদ করতেই হয়, সেক্ষেত্রে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বন্দোবস্ত করা যেতেই পারে । তাছাড়া, যে মামলায় নিম্ন আদালতে চার্জশিট পেশ করা হয়েছে, সেই একই মামলায় কাউকে কি আবার সাক্ষী হিসাবে ডেকে পাঠানোর নোটিশ দেওয়া যায়?”বিচারপতির প্রশ্নের উত্তরে এজি বলেন, “তদন্তের প্রয়োজনে নিশ্চয় চার্জশিট পেশের পরও কাউকে সাক্ষী হিসাবে ডেকে পাঠানোর নোটিশ দেওয়া যায় । সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে অতিরিক্ত চার্জশিট পেশ করতে হবে । নৌশাদের বন্ধুকে নিউ মার্কেট থানায় রুজু হওয়া মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে । বেশ কিছু নথিও খতিয়ে দেখতে হবে । ভার্চুয়াল জিজ্ঞাসাবাদে সেটি সম্ভব নয় ।”দুই পক্ষের সওয়াল শোনার পর বিচারপতি রাজশেখর মান্থার বলেন, -‘ পুলিশ শেখ শামসুর আলমকে ভার্চুয়ালি জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে । কোনও নথির প্রয়োজন হলে তার জন্য শামসুর আলমকে নোটিশ পাঠিয়ে তা পেশ করতে বলতে হবে । এর জন্য ওই ব্যবসায়ীকে তিনদিন আগে সময় দিতে হবে । পাশাপাশি, তদন্ত কোন পথে এগোচ্ছে, তার বিস্তারিত তথ্য রিপোর্ট আকারে আদালতে জমা করতে হবে পুলিশকে । পরবর্তীতে পুলিশ যদি শামসুরকে হেফাজতে নিতে চায়, তার জন্যও আদালতে আবেদন করতে হবে । কিন্তু, তার আগে পর্যন্ত শেখ শামসুর আলমের বিরুদ্ধে কোনও কঠোর পদক্ষেপ করা যাবে না । দু সপ্তাহ পর এই মামলার ফের শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে ।
