শিশুদের মনকে বিষাক্ত করে এমন পাঠ্য ও পাঠের অনুমতি কর্নাটকে দেওয়া হবে না: সিদ্দারামাইয়া

বেঙ্গালুরু ৩০মে :হালাল, হিজাব, লাভ জেহাদ। গত এক দেড় বছরে কর্ণাটকের রাজনীতিতে এই শব্দগুলিই ছিল সবচেয়ে পরিচিত এবং জনপ্রিয় শব্দ। ক্ষমতায় ফিরেই পুলিশের অভিধান থেকে এই শব্দগুলি ছুঁড়ে ফেলে দিতে চাইছেন সেরাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। পুলিশ প্রশাসনকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, কোনও অপরাধীকে ধর্মের আয়নায় দেখা যাবে না। বা কারও উপর নীতি পুলিশগিরি করা চলবে না। সেই সঙ্গে কর্ণাটকের সম্প্রীতি এবং ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্য রক্ষার ইস্যুতে আপস করার প্রশ্নই আসে না বলে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ঘৃণার রাজনীতি সহ্য করা হবে না এবং ভয়ের পরিবেশ নির্মূল করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বাড়ির অফিস ‘কৃষ্ণ’-তে ৪০ জনেরও বেশি লেখক এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই আশ্বাস দেন। বিজেপির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার জন্য সিদ্দারামাইয়া লেখকদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, দেশকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে এবং এর বহুত্ববাদকে ধ্বংস করে সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনের সময় জনগণকে বিজেপি বিভ্রান্ত করে । তিনি আশ্বস্ত করেন, পাঠ্য ও পাঠের মাধ্যমে শিশুদের মন দূষিত করার কাজটি ক্ষমা করা যাবে না। তিনি বলেন, শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ায় আমরা আলোচনা করে ব্যবস্থা নেব যাতে শিশুদের পড়ালেখার ব্যাঘাত না ঘটে।

২০২২ সালে, বিতর্কিত ডানপন্থী বক্তা রোহিত চক্রতীর্থের নেতৃত্বে বাসভরাজ বোম্বাই সরকার-নিযুক্ত কর্ণাটক পাঠ্যপুস্তক পুনর্বিবেচনা কমিটি বেশ কিছু পরিবর্তন করে যার তীব্র বিরোধিতা করে ওই রাজ্যের শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী এবং লেখকরা । বিজেপি সরকার আরএসএস মতাদর্শী বিনায়ক দামোদর সাভারকর এবং কেবি হেডগেওয়ারের পাঠ যোগ করে পাঠ্যপুস্তককে গেরুয়াকরণ করে বলে অভিযোগ ওঠে। বিপরীতে মহাত্মা গান্ধী , বিআর আম্বেদকর, জওহরলাল নেহেরুর গুরুত্বপূর্ণ পাঠগুলিও সরিয়ে দেওয়া হয়। পাঠ্যপুস্তক থেকে মোট ২৭
জন দলিত লেখকের লেখা বাদ দেওয়া হয়। উল্টোদিকে ৯৫% ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের লেখকদের লেখা স্থান পায় পাঠ্যপুস্তকে ।ব্যাপক বিরোধিতার পর, বিজেপি সরকার সংশোধিত স্কুল পাঠ্যপুস্তকে আটটি পরিবর্তন করে একটি আদেশ জারি করেছিল ।

লেখকদের সঙ্গে বৈঠকের পরে, সিএম সিদ্দারামাইয়া বলেছেন,যে কন্নড় কর্মী, কৃষক-শ্রমিক-দলিত কর্মী এবং লেখকদের বিরুদ্ধে পূর্বের দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হবে। নতুন শিক্ষানীতির (এনইপি) নামে শিক্ষা খাতকে ভেজাল হতে দেওয়া হবে না। এই বিষয়ে বিস্তৃতভাবে আলোচনা করতে এবং কঠোর এবং সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আবারও একটি পৃথক সভা ডাকা হবে বলে সিদ্দারামাইয়া জানান ।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন ,”আমি ইতিমধ্যেই রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালককে যারা লেখকদের হুমকি দেয় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কঠোর নির্দেশ জারি করেছ। ” সিদ্দারামাইয়া বলেছেন যে তিনি লেখকদের দেওয়া চিঠিতে তথ্যগুলি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন এবং আমাদের সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
সিদ্দারামাইয়া জোর দিয়ে বলেন ,”যারা আইন নিজের হাতে তুলে নেয় এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চালায় তাদের আইন অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হবে। “