সরকারি স্কুল শিক্ষক ২২ বছর পর গ্রেফতার; পুলিশ হানিফ শেখকে ‘ভয়ংকর সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে

নয়াদিল্লি ২৭ ফেব্রুয়ারি:হানিফ শেখ, একজন সরকারি স্কুল শিক্ষক এবং নিষিদ্ধ সংগঠন সিমি-এর সদস্য বলে পুলিশের অভিযোগ। ২২ বছরের দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর দিল্লি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশের বক্তব্য,২২ বছর ধরে বিভিন্ন ‘গোপন’ আস্তানায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। নাম পাল্টে পরিচয় গোপন করে ছিলেন অন্তরালে। সেখান থেকেই নিষিদ্ধ জঙ্গি ছাত্র সংগঠন স্টুডেন্ট ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া-র (সিমি) বিভিন্ন কার্যকলাপ সামলাতেন হানিফ শেখ। সেই হানিফকে ফাঁদ পেতে গ্রেফতার করল দিল্লি পুলিশ।
হানিফের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনের (ইউএপিএ) অধীনে মামলা দায়ের হয়। ২০০১ সালে তাঁর বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’-এর অভিযোগও আনা হয়। তার পর থেকেই ‘পলাতক’ ছিলেন তিনি। পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়লেন হানিফ।
পুলিশ সূত্রে খবর, হানিফকে ধরার জন্য একটি বিশেষ দল গঠন করেছিল দিল্লি পুলিশ। সেই দল হানিফের গতিবিধির উপর নজর রাখছিল। তবে প্রথমের দিকে হানিফের নাগাল পাওয়ার মতো তেমন কোনও ‘ক্লু’ ছিল না। শুধু ‘ইসলামি আন্দোলন’ নামে এক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে পাওয়া গিয়েছিল ‘হানিফ হুদাই’-এর নাম। সেই নামের সঙ্গে আসল হানিফ শেখের মিল খুঁজে পাওয়া মুশকিল ছিল।
গোপন সূত্রে পুলিশ খবর পায় হানিফ শেখ, মহম্মদ হানিফ নামে মহারাষ্ট্রের ভুসাওয়ালে থাকছেন। সেখানকার একটি উর্দু মাধ্যম মিউনিসিপ্যাল স্কুলে শিক্ষক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। সেই তথ্যের ভিত্তিতে তল্লাশি চালিয়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ফাঁদ পেতে দিল্লি পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে।
হানিফ শেখ ১৯৯৭ সালে মারুল জলগাঁওতে কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন। সে বছরই তিনি সিমি-তে যোগ দেন। ওই সংগঠনের সক্রিয় সদস্য হিসাবে কাজ শুরু করেন। তাঁর উৎসাহ দেখে তৎকালীন সিমি প্রধান শাহিদ বদর ২০০১ সালে ‘ইসলামিক মুভমেন্ট’-এর উর্দু সংস্করণের হানিফকে সম্পাদক করে দেন। সেখানে হানিফের একাধিক লেখা ‘যুব সমাজ’-এ প্রভাব ফেলছে বলে অভিযোগ ওঠে। পুলিশের বক্তব্য ছিল, ভুল তথ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতেন হানিফ। ‘উস্কানিমূলক’ বক্তব্যও থাকত তাঁর লেখায়, এমন অভিযোগও ছিল পুলিশের।
২০০১ সালে পুলিশ দিল্লির জাকির নগরে সিমি-র সদর দফতরে অভিযান চালায়। তবে পুলিশের ‘নাগাল থেকে পালাতে সক্ষম হন’ হানিফ এবং আরও কয়েক জন। গ্রেফতারি এড়াতে হানিফ বার বার নিজের নাম এবং বাসস্থান পরিবর্তন করতে থাকতেন। অন্তরালে থাকলেও উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং গুজরাতের যেখানেই সভা হত সেখানে হাজির হতেন। শুধু তা-ই নয় সংগঠনের জন্য টাকার জোগানও দিতেন হানিফ। এত দিন পর পুলিশ তাঁকে ধরতে পারল।এই দাবি দিল্লি পুলিশের।
হানিফ শেখের পাঁচ ভাইবোন, এক স্ত্রী এবং তিন সন্তান। তিনি এখন ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার’ অভিযোগে আইনি প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়েছেন।