ভারতে সংখ্যালঘু ক্রিশ্চান সম্প্রদায়ের উপর উগ্র হিন্দু মৌলবাদীদের দ্বারা সহিংসতার ঘটনা নাটকীয় ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউনাইটেড ক্রিশ্চান ফোরাম প্রতিবেদন পেশ করে জানিয়েছে, ২০২৪ সালও এর ব্যতিক্রম নয়। এই বছরেও স্বস্তি মেলেনি এই আক্রমণ থেকে।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত ইউসিএফ টোল ফ্রি নম্বর ১৮০০২০২৮৪৫৪৫-এ ক্রিশ্চান সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ১৬১টি সহিংসতার ঘটনার কথা উঠে এসেছে। ২০২৪ সালের প্রথম ৭৫ দিন ভারতীয় ক্রিশ্চান সম্প্রদায়ের কাছে প্রাথমিক অধিকার ও সুরক্ষা থেকে বঞ্চনা ও অবনমনের সময়। এদিকে, দেশে লোকসভা নির্বাচনের আর কয়েক সপ্তাহ বাকি। ক্রিশ্চানদের বিরুদ্ধে জানুয়ারিতে ৭০টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, ফেব্রুয়ারিতে ৬২টি এবং মার্চের প্রথম ১৫ দিনে ২৯টি এমন ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
ক্রিশ্চানদের উপর হামলায় ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ছত্তিশগড়। এই রাজ্যে ক্রিশ্চান-বিরোধী সহিংসতার ঘটনা নথিভুক্ত হয়ছে ৪৭টি। ক্রিশ্চানদের গ্রামের কুয়ো থেকে জল নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না। দুর্ভাগ্যবশত, বহু ক্রিশ্চান এমন আছে যাদের খ্রিস্ট ধর্মের রীতি মেনে সমাধিস্থ করতে দেওয়া হয় না। তাদেরও ছাড় নেই। মারা গেলেও তাদের উপর নেমে আসে নিগ্রহ। ঘরওয়াপসির উদ্দেশ্যে স্থানীয়রা ক্রিশ্চানদের মৃতদেহ জ্বালিয়ে দিতে বাধ্য করে। হুমকি দেয়। একই ঘটনা দেখা গেছে ২০২২ সালের ক্রিসমাসে। ক্রিশ্চানদের তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয়রা তাদের বাড়িঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে, সেই সঙ্গে প্রাণনাশের হুমকি। শারীরিক ভাবেও নিগ্রহ করা হয়েছে ক্রিশ্চানদের।
ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলির মধ্যে উত্তরপ্রদেশ রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে যেখানে ক্রিশ্চান সম্প্রদায় লাগাতার সহিংসতার শিকার হয়। ধর্মীয় নির্যাতনে আক্রান্ত হয় অহরহ। এই রাজ্যে ৮০টি লোকসভা আসন রয়েছে এবং এখান থেকে কম করে ৩৬টি এমন সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ প্যাস্টরদের বিরুদ্ধে ধর্মান্তরণের ফালতু অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেছে। এমনকি জন্মদিন উপলক্ষ্যে উৎসব বা অন্যান্য জমায়েতে প্রার্থনা করার জন্যও যাজকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ থেকে স্পষ্টত প্রমাণিত হয়, ক্রিশ্চানদের বিরুদ্ধে এটা রাজ্য-পোষিত ও চালিত ইচ্ছাকৃত হয়রানি। ইউপি ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনে ৩০ জনের বেশি প্যাস্টরকে গ্রেফতার ও আটক করা হয়েছে বলে ইউসিএফ হেল্প ডেস্কে খবর এসেছে (ইউপি ফোরা)।
চলতি বছরে ক্রিশ্চানদের বিরুদ্ধে অন্য রাজ্যগুলিতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এই তালিকায় রয়েছে মধ্যপ্রদেশ (১৪), হরিয়ানা (১০), রাজস্থান (৯), ঝাড়খণ্ড ও কর্ণাটক (৮টি করে), পঞ্জাব, অন্ধ্রপ্রদেশ (৬টি করে), গুজরাত অ বিহার (৩টি করে), তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা ও ওড়িশা (২টি করে), দিল্লি, হিমাচল প্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও পশ্চিমবঙ্গ (১টি করে)।
এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভারতের ১৯টি পৃথক রাজ্যে নিজেদের ধর্ম প্রচারের কারণে ক্রিশ্চানরা প্রাণনাশের হুমকির মুখে পড়ছে। ২০২৪ সালের প্রথম ৭৫ দিনে ধর্মান্তরণের মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে ১২২ জন ক্রিশ্চানের বিরুদ্ধে। তাদের হয় গ্রেফতার করা হয়েছে, নয়ত হাজতে পোরা হয়েছে। ইউসিএফ দাবি করেছে, যারা এই হিংসাত্মক অপরাধ সংঘটিত করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিক নেতৃত্ব। পাশাপাশি, তাদের আশা ও প্রার্থনা, শান্ত ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।
