‘গণপিটুনি,গো-রক্ষকদের তৎপরতা রুখতে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে?’ রাজ্যগুলির কাছে রিপোর্ট চাইল সুপ্রিম কোর্ট

নয়াদিল্লি ১৬ এপ্রিল:গণপিটুনি, কথিত গো-রক্ষকদের তৎপরতার বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যগুলির কাছে তা জানতে চেয়েছে।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট বিভিন্ন রাজ্য সরকারকে গণপিটুনি এবং গরু সতর্কতার নামে হামলার ঘটনায় নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে ছয় সপ্তাহের মধ্যে অবহিত করতে বলেছে৷ বিচারপতি বি আর গাভাই, অরবিন্দ কুমার এবং সন্দীপ মেহতার একটি বেঞ্চ ছয় সপ্তাহের পরে আবার শুনানির কথা জানিয়েছে। একটি মহিলা সংস্থা গো-রক্ষকদের দ্বারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণপিটুনি এবং জনতার সহিংসতার ঘটনাগুলিকে কার্যকরভাবে মোকাবেলা করার জন্য শীর্ষ আদালতের ২০১৮ সালের রায়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে রাজ্যগুলিকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা চাইছে৷
সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ আদেশে বলেছে,”আমরা দেখতে পেয়েছি যে বেশিরভাগ রাজ্যই গণপিটুনি বা মব লিঞ্চিংয়ের উদাহরণ দিয়ে রিট পিটিশনে তাদের উত্তরের হলফনামা দাখিল করেনি। রাজ্যগুলির কাছ থেকে আশা করা হয়েছিল যে এই ধরনের ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানাবে। আমরা ছয় সপ্তাহের সময় দিই।কয়েকটি রাজ্য তাদের উত্তর দাখিল করেনি এবং কয়েকটি রাজ্য এই ধরনের ক্ষেত্রে তাদের নেওয়া পদক্ষেপের বিশদ বিবরণ দিয়েছে।
এর আগে সুপ্রিম কোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং ছয়টি রাজ্য সরকারের (মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, রাজস্থান, বিহার, মধ্যপ্রদেশ এবং হরিয়ানা) গো-রক্ষকদের দ্বারা মুসলমানদের উপর গণপিটুনি এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে কাজ করার ধারাবাহিক ব্যর্থতার জন্য ব্যাখ্যা চেয়েছে।
গণপিটুনি এবং ঘৃণাভাষণের ঘটনা রুখতে ‘নোডাল অফিসার’ নিয়োগ নিয়ে কেন্দ্রের কাছে রিপোর্টও চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি এসভিএম ভট্টির বেঞ্চের নির্দেশ ছিল, কোন কোন রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের কতগুলি জেলায় ‘নোডাল অফিসার’ নিয়োগ করেছে, তা সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির থেকে জেনে তিন সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে হবে কেন্দ্রকে
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গণপিটুনি এবং ঘৃণাভাষণের ক্রমবর্ধমান ঘটনা নিয়ে ২০১৮ সালে উদ্বেগ প্রকাশ করে এ সংক্রান্ত অপরাধের উপর নজরদারি এবং স্বতঃপ্রণোদিত আইনি পদক্ষেপের উদ্দেশ্যে অন্তত ‘সুপার’ পদমর্যাদার কোনও পুলিশ আধিকারিককে জেলা স্তরে ‘নোডাল অফিসার’ হিসাবে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। ঘৃণাভাষণ এবং তা থেকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার ঘটনার মোকাবিলায় ‘সন্দেহজনক’ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সিসিটিভি বসানো এবং ভিডিয়োগ্রাফির নিদানও দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু অভিযোগ, সাম্প্রতিক কালে একাধিক রাজ্যে গোষ্ঠীহিংসার ঘটনায় দেখা গিয়েছে আগাম সতর্কতামূলক কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি সরকারি তরফে। তা ছাড়া ২০২১ সালে দিল্লি এবং হরিদ্বারে যে ধর্ম সংসদ বসেছিল তাতে বক্তাদের একাংশের ঘৃণাভাষণের প্রেক্ষিতে দিল্লি আর উত্তরাখণ্ডে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেনি বলেও অভিযোগ রয়েছে বলে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ২০১৮ সালের ওই নির্দেশিকা কতটা পালিত হয়েছে, সে বিষয়েই রিপোর্ট তলব করেছে দুই বিচারপতির বেঞ্চ। প্রসঙ্গত, ঘৃণাভাষণের অভিযোগে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের কাছে নালিশ জানিয়েছিল মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর।