পরপর দুটি নির্দেশে হাজারের বেশি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ছাড়পত্র দিল হাইকোর্ট

সপ্তাহের শুরুতেই কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ এক আদেশনামায় ২৫ হাজারের বেশি চাকরি বাতিল করেছে। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার দু দফায় কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার হাজারের বেশি নিয়োগে ছাড়পত্র দিলেন। যা সাধারণ চাকরিপ্রার্থীদের কাছে অত্যন্ত সুখকর। প্রাথমিকে বৃহস্পতিবার প্রায় ৮০০ প্রার্থীকে শিক্ষক পদে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। শুক্রবার আরও ২৫০ জনকে নিয়োগের নির্দেশ দিলেন তিনি। ২০০৯ সালের প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এই নির্দেশ দিয়েছে আদালত। শুক্রবার নির্দেশ হয়েছে মালদা জেলার প্রার্থীদের জন্য।এদিন আদালত জানিয়েছে, -‘২০০৯ সাল প্রকাশিত প্রাথমিকের বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে প্যানেলভুক্ত ২৫০ জনকে ২ মাসের মধ্যে নিয়োগ দিতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদকে’। এদিন বিচারপতি বলেন, -‘দুর্নীতি হয়েছে। তদন্ত হলে তো পুরো প্যানেলই বাতিল হয়ে যাবে। তার থেকে অন্তত কিছু প্রার্থী চাকরি পাক’। মামলাকারীদের অভিযোগ , -‘২০০৯ সালের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে প্রাথমিকে নিয়োগে প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক ছিল না। এমনকী টেট পরীক্ষাও ছিল না। ২০১০ সালে জেলাভিত্তিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় তারা। প্যানেলে নামও বেরোয়। কিন্ত ২০১১ সালে তৃণমূল সরকার এসে টেট পরীক্ষা চালু করে ওই প্যানেল বাতিল ঘোষণা করে’। দীর্ঘ ১৫ বছর আইনি লড়াই লড়ে অবশেষে চাকরি পেতে চলেছেন তাঁরা। গত বৃহস্পতিবার এই মামলায় উত্তর ২৪ পরগনার প্রায় ৮০০ প্রার্থীকে চাকরি দিতে নির্দেশ দেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। ২০০৯ সালের প্রাথমিকের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় উত্তর ২৪ পরগনায় দুর্নীতি হয়েছিল । যার ফলে ৮০০ জনের বেশি প্যানেলভুক্ত প্রার্থী চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সেই চাকরিতে তাঁদের ২ মাসের মধ্যে নিয়োগ করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। ওই নিয়োগপ্রক্রিয়ায় যে দুর্নীতি হয়েছিল তা আদালতে স্বীকার করে নিয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। এর পর বিচারপতি সংসদের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, -‘তদন্ত চান, না কি বঞ্চিতদের নিয়োগ দেবেন’? জবাবে সংসদের আইনজীবী জানান, নিয়োগ দিতে প্রস্তুত তারা। ২০০৯ সালের দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রাথমিকের নিয়োগ প্রক্রিয়াতেও দুর্নীতি হয়েছিল। আদালতের নির্দেশে সেখানেও ১৫০০ প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে বাধ্য হয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। গত সোমবার কলকাতা হাইকোর্ট এসএসসি দুর্নীতিতে প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেয়। এর পর আদালতের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন আক্রমণ শানিয়ে ‘চাকরি খেয়ে নেওয়া’র অভিযোগ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে শুক্রবার আদালতেরই নির্দেশে ১৫ বছর পর নিয়োগ পেতে চলেছেন প্রায় আরও ২৫০ চাকরিপ্রার্থী। গত বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনার জেলার নিয়োগে ছাড়পত্র দেওয়া হয় , শুক্রবার মালদার চাকরি প্রার্থীদের চাকরি দেওয়ার নির্দেশ বিচারপতি রাজা শেখর মান্থার।প্রাথমিকে ২০০৯ সালে মালদার পরীক্ষার্থীদের নিয়োগের নির্দেশ দিলেন বিচারপতি রাজা শেখর মান্থা। দু’মাসের মধ্যে এই চাকরি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।এরফলে চাকরি পেতে চলেছেন প্রায় ২৫০পরীক্ষার্থী, যারা ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত আদালতের দারস্থ হয়েছে।বিচারপতি মান্থা মন্তব্য করেছেন, ‘দূর্নীতি হয়েছে, তদন্ত হলে পুরো প্যানেল বাতিল হতে পারতো। সেই জায়গায় কিছু লোক অন্তত চাকরি পাক’। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ আদালতে জানিয়েছে, ‘আমরা চাকরি দিতে প্রস্তুত’। চাকরি বাতিল নির্দেশের মাঝে দু -দুটি নিয়োগের ছাড়পত্র মেলায় বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের অনেকেই খুশি।