মণিপুরে জাতিদাঙ্গার ১ বছর,খুনিরা অধরা, বিচার তিমিরেই

নয়াদিল্লি: মণিপুরে জাতিগত সংঘাতের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে কুকি-জো এবং মেইতেই নাগরিক সমাজ সংস্থাগুলি শুক্রবার ৩ মে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করেছে৷
যখন কুকি গোষ্ঠীগুলি তাদের জনগণের পতিত এবং “জাগরণের” জন্য এটিকে “স্মরণ” দিবস হিসাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মেইতেই সংস্থাগুলি বলেছে যে তারা এটিকে “যেদিন মাদক-সন্ত্রাসীদের দ্বারা সমর্থিত অবৈধ অভিবাসীরা তাদের আগ্রাসন শুরু করেছিল” হিসাবে পালন করবে বলে ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকা রিপোর্ট করেছে।
সম্প্রতি মণিপুরের বিষ্ণুপুর জেলার কুম্বি থানা এলাকায় হাইওয়েতে পুলিশের পোশাক পরা ১১ তরুণকে সেনা বাহিনী আটক করে। পরনে পুলিশের পোশাক থাকলেও সঙ্গে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দেখে সন্দেহ হয় সেনার। ওই ধরনের অত্যাধুনিক অস্ত্র সাধারণ পুলিশ কর্মীদের কাছে থাকার কথা নয়। তল্লাশি চালিয়ে সেনা জওয়ানেরা তাদের কাছ থেকে ছয়শো বুলেট সহ একে সিরিজের বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে।
কিন্তু আটক ১১জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার আগেই কয়েকশো মহিলা জড়ো হয়ে ধৃতদের ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এরপর অস্ত্র গোলা-বারুদ ফেরানোর দাবিতে শুরু হয় অবরোধ। বিশাল সেনা কনভয় দুপুর পর্যন্ত আটকে রাখে হাজার হাজার মহিলা। পুলিশ এসে অনেক কষ্টে পরিস্থিতি সামাল দেয়। ঘটনাটি গত মঙ্গলবারের।
মণিপুরে মহিলাদের এই ভূমিকা নতুন নয়। বিশেষ করে মেইতেই সম্প্রদায়ের নারীরা সাহসী এবং সংঘবদ্ধ। স্বজাতির দাঙ্গাবাজদের আশ্রয় দেওয়া, প্রতিপক্ষের গ্রামে হামলা চালানো, ধৃতদের ছিনিয়ে নেওয়াতে মহিলাদের সক্রিয়তা সামনে এসেছে।
একইভাবে সক্রিয় কুকি মহিলারাও। তারাও পরিবারের পুরুষ সদস্যের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী এবং মেইতেইদের জঙ্গি সংগঠনগুলির হামলা মোকাবিলা করে পাল্টা আক্রমণ শানাচ্ছেন।
ক’দিন আগেই এক অতিরিক্ত পুলিশ কর্তার অফিসে হামলা চালায় কুকি জঙ্গিরা। এছাড়া দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে গোলাগুলি, বোমা, মর্টার নিক্ষেপ তো লেগেই আছে। দুই শিবিরের হাতেই রয়েছে থানা এবং অস্ত্রাগার থেকে লুঠ হওয়া অস্ত্রশস্ত্র। গত সপ্তাহেই বিষ্ণুপুরে মর্টারের আঘাতে নিহত হন রাতে ক্যাম্পে ডিউটিরত সিআরপিএফের দুই বাঙালি জওয়ান।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই মণিপুরের দুটি আসনে লোকসভার ভোট গ্রহণ-বর্জনের মধ্যে মোটের উপর শান্তিতেই হয়েছে বলে সরকারের দাবি। ভোটদানের হারও হতাশাব্যঞ্জক নয়। কুকি ও মেইতেইদের একাধিক সংগঠন ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিল বটে। তাতে তেমন একটা সাড়া মেলেনি। যদিও ভোট হয়েছে ‘জোর যার মুলুক তার’ পরিবেশে। ভোটের পর নতুন করে অশান্তি শুরু হয়েছে জাতিদাঙ্গার বর্ষপূর্তিকে সামনে রেখে।
৩মে জাতিদাঙ্গার বর্ষপূর্তিকে সামনে রেখে কুকিদের একাধিক সংগঠন ৩ মে’তে ‘কালা দিবস’ ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে, মেইতেইরা বলছে মণিপুরের ইতিহাসে ২০২৩-এর ৩ মে বহিরাগত মাদককারবারিদের আক্রমণের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে।