বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি অমৃতা সিনহা এজলাসে উঠে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাখিল মামলা।রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে রাজভবনের সামনে ধরনায় বসার অনুমতি দিল না কলকাতা হাইকোর্ট। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে এই মামলার শুনানি চলে । বিচারপতি মামলাকারী শুভেন্দু অধিকারীকে বিকল্প কোনও জায়গা খুঁজে বার করার পরামর্শ দেন। এদিনের শুনানিতে বিচারপতি বলেন, ‘বিকল্প জায়গার সন্ধান নিয়ে আসুন, ভেবে দেখছি।’ভোট পরবর্তী হিংসায় ‘আক্রান্ত’দের সঙ্গে নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু রাজভবনে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন তিনি। এরপর ‘আক্রান্ত’দের সঙ্গে নিয়ে রাজভবনের সামনে ধরনায় বসতে চাইছেন শুভেন্দু। গত ১৩ জুন পুলিশের কাছে আবেদন জানানো হয়। গত মঙ্গলবার পুলিশ সেই আবেদন খারিজ করে বলে আদালতে দাবি করেন শুভেন্দুর আইনজীবীর। এক্ষেত্রে পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছেন শুভেন্দু অধিকারী । কারণ এর আগে তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রাজভবনের বাইরে ধরনায় বসেছিলেন একশো দিনের কাজের টাকা আদায়-সহ কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রতিবাদে। তাতে পুলিশ অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু শুভেন্দুকে কেন দেওয়া হচ্ছে না? তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়।এদিনের শুনানিতে মামলকারীদের আইনজীবী বিলদ্বল ভট্টাচার্য বলেন, “ভোট পরবর্তী হিংসার শিকার যাঁরা, তাঁদের নিয়ে ধর্না দিতে চান।” বিচারপতি মামলাকারী আইনজীবী কে প্রশ্ন করেন, “ওখানেই কেন অবস্থানে বসতে হবে? শাসক দল বসেছিল বলে?” মামলাকারীদের আইনজীবী বলেন, “আমরা মনে করি রাজ্যপাল রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান সেই কারণে আমরা রাজভবনের সামনে ধর্না দিতে চাই।” আদালতে তাঁরা জানান, শান্তিপূর্ণ ধর্না হবে। কোনও স্টেজ পর্যন্ত করা হবে না। কিন্তু পুলিশ প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে আমাদের রাজভবনের সামনে ধর্না অনুমতি দেয়নি। ওয়াই চ্যানেলে বসতে বলছে।মামলাকারী আরও বলেন, “যদি বলতো আজ সপ্তাহের মাঝে কোনও দিন, তাহলে আমরা শনি না রবিবার বসতে পারি। কিন্তু আমাদের অনুমতি কেন দেওয়া হচ্ছে না কেন?” আদালতে তা উল্লেখ করা হয়,ঠিক ওখানেই শাসক দল ধর্না দিয়েছে, এমনকি স্টেজ করে। তাহলে এক্ষেত্রে অনুমতি দেওয়া হবে না কেন?বিচারপতি সিনহা প্রশ্ন করেন, “এই প্রশাসনিক কারণটা কী?” এডভোকেট জেনরাল বলেন, “মামলাকারী যে আবেদন করেছেন, সেটা কি আদৌ আবেদন বলা যায়?” বিচারপতি আরও বলেন, “একজন করতে পারল, একজন করার অনুমতি পেলো না, এটা হলে তো অসাম্যের অভিযোগ উঠবেই। আমি নেগেটিভ ইকুয়ালিটির কথা বলতে পারিনা।”বিচারপতি সিনহা এজিকে প্রশ্ন করেন, “আপনি বললেন ওই এলাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে ১৪৪ ধারা জারি থাকে।তাহলে ওই সময় যারা ১৪৪ ধারা ভেঙে যাঁরা ধর্না দিয়েছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কি আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে” এজি বলেন, “আমাকে ইন্সট্রাকশন নিয়ে বলতে হবে।”বিচারপতির ফের প্রশ্ন মামলাকারীর আইনজীবীকে বলেন, ” কেন আপনি ওখানেই ধরনা দিতে চাইছেন?এর আগে কেউ আইন ভেঙে ধরনা দিলে আরেক জনকেও কি ১৪৪ ভেঙে ধরনা দিতে হবে? তাহলে তো পরশু অন্য কেউ একই আবদার করবে।” ভোটপরবর্তী সন্ত্রাসে আক্রান্তদের নিয়ে রাজভবনের সামনে অবস্থানে বসতে চেয়ে বুধবার, হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুনানি চলাকালীন বিচারপতি অমৃতা সিনহা শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবীর কাছে বিকল্প জায়গার সন্ধান চান। পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন তোলেন, গত বছর অক্টোবরে শাসকদলে ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজভবনের সামনে ধর্ণায় বসে।তার পাল্টাই কী সেই স্থানকে বেছে নিয়েছেন বিরোধী দলনেতা? পাশাপাশি বিচারপতি অমৃতা সিনহার পর্যবেক্ষণ শাসকদল সেখানে কর্মসূচী করেছেন বলে আপনারাও সেখানেই কর্মসূচী পালন করবেন এটা কোন যুক্তি হতে পারে না’।ভোটপরবর্তী সন্ত্রাসে আক্রান্তদের নিয়ে অবস্থানে বসতে তৃণমূলের ধর্ণা স্থানকেই কেন বেছে নেওয়া হল সেই প্রশ্নও এদিন জানতে চায় আদালত। শুভেন্দুর করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিপ্তে গত অক্টোবরে ১৪৪ ধারাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যারা তৃণমূলের ধর্ণা অবস্থানে সামিল হয়েছিলেন তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে শুক্রবারের মধ্যে রাজ্যসরকারকে জবাব দাখিল করতে বলেছেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। ২১ জুন এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে ।
