নয়াদিল্লি ৪ আগস্ট :স্বাধীনতার সময়কালে অনেক মুসলিম ভারত ছেড়ে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন। ভারতে তাদের থেকে যাওয়া সম্পত্তি মুসলিমদেরই বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহারের জন্য ১৯৫৪ সালে প্রথম পাশ হয় ওয়াকফ আইন। ১৯৯৫ এবং ২০১৩ সালে যা পরিবর্তন এবং পরিমার্জনের মাধ্যমে বিশেষ কাজ করার ক্ষমতা পায় ওয়াকফ বোর্ড। ওয়াকফের সম্পত্তি সব মুসলমানদেরই দেওয়া।২০২৪ সাল অবধি প্রায় ৯ লক্ষ একরেরও বেশি জমি আছে ওয়াকফ বোর্ডের।
ওয়াকফ বোর্ডের সেই এক্তিয়ার এবং ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে বিল আনতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এবার ওয়াকফ আইনে প্রায় ৪০টি সংশোধনী আনার ভাবনাচিন্তা করছে সরকার।
সূত্রের খবর, মুসলিমদের দান করা বা দেওয়া আগে যে কোনও সম্পত্তি বা জমি কোনরকম সরকারি পর্যালোচনা ছাড়াই ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হত। যেকোনও সম্পত্তি বা জমিতে ওয়াকফ বোর্ড দাবি জানালে, বাধ্যতামূলক সরকারি পর্যালোচনার নিয়ম চালু করার পক্ষপাতী সরকার। সম্পত্তি নিয়ে ব্যক্তিগত মালিকানা বা ওয়াকফ বোর্ডের বাদানুবাদ চলছে, সেই সম্পত্তির মালিকানা আদতে কার, তাও খতিয়ে দেখার আইনি এক্তিয়ার সরকার নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছে।এমনকী, ওয়াকফ বোর্ড গঠন এবং পরিচালনার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসতে পারে।
জানা গিয়েছে, গত শুক্রবার মন্ত্রিসভার বৈঠকেই এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে সংসদে এই বিষয়টি তুলে ধরা হতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের মে মাসে দিল্লি হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল যে কেন্দ্রীয় সরকার ১২৩টি সম্পত্তি পরিদর্শন করতে পারে। এই জমির উপরে অধিকার দাবি করেছিল দিল্লি ওয়াকফ বোর্ড। গত বছরের অগস্ট মাসে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকও এই সম্পত্তিগুলি নিয়ে নোটিস জারি করে।
বর্তমানে সারা দেশে ২৮টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে মোট ৩০টি ওয়াকফ বোর্ড রয়েছে।
১৯৫৪ সালে পাশ হয় ওয়াকফ আইন। ১৯৯৫ সালে ওয়াকফ আইন সংশোধন করে, ওয়াকফ বোর্ডকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। ওয়াকফ বোর্ডের সারা দেশে ৮.৭ লক্ষেরও বেশি সম্পত্তি রয়েছে, যা ৯.৪ লক্ষ একর জুড়ে বিস্তৃত।
গত শুক্রবারই এই নিয়ে একটি ক্যাবিনেট মিটিং ডাকা হয়েছিল। সূত্র মারফৎ জানা যাচ্ছে যে নতুন প্রস্তাবিত বিল অনুযায়ী ওয়াকফ বোর্ডের দাবি করা সম্পত্তিগুলির দাবির বৈধতা নিয়ে ভেরিফিকেশন করতেই হবে এবার থেকে। এমনকি অতীতে যে সমস্ত সম্পত্তি গুলি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে সেগুলিও এই ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ার মধ্যে আসবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের বহু আগে থেকেই এই ব্যাপারে সলতে পাকানো শুরু হয়ে গিয়েছিল। কার্যত সেই সময়ই এই নতুন বিলের ব্লু প্রিন্ট তৈরি করে ফেলেছিল তৎকালীন বিজেপি সরকার। সবমিলিয়ে ১৯৫৪ সাল থেকে শুরু হওয়া ভারতীয় ওয়াকফ বোর্ডের যে ক্ষমতা ছিল তা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে। মিম নেতা আসাউদ্দিন ওয়াইসি একে ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন ।
উল্লেখ্য ,ভারতীয় সেনা এবং রেলের পর সব থেকে বেশি জমি বা সম্পত্তি রয়েছে ভারতীয় ওয়াকফ বোর্ডের ।
