শেখ হাসিনাকে সরাতে কেন বাধ্য হয়েছিলেন বাংলাদেশ সেনাপ্রধান

ভারতের বিখ্যাত ‘দি উইক’ পত্রিকা সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বিশ্বস্ত সূত্র উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও তাদের উপর গুলি চালিয়ে শেখ হাসিনা সরকার যে মৃত্যু-মিছিল শুরু করেছিল, তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জুনিয়র অফিসাররা। তাঁদের চাপেই বাংলাদেশ সেনাপ্রধান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সরে যেতে বাধ্য করেন।

বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে মাসব্যাপী বিক্ষোভের সূত্র ধরে পরিস্থিতি যখন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছিল, এমন সময় দেশজুড়ে সেনা মোতায়েন করে সরকার। এর মধ্যে ২ আগস্ট সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে একটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। ওই দিন এক বৈঠকে তরুণ সেনা কর্মকর্তারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বৈঠক সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র থেকে এ তথ্য পেয়েছে ভারতের সাপ্তাহিক সংবাদ সাময়িকী দি উইক।

বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মত বিনিময়ের জন্য সেনাপ্রধান বৈঠকটি ডেকেছিলেন। সূত্রটি জানায়, সেনা কর্মকর্তাদের ক্ষোভ প্রশমনে সেনাপ্রধান এ বিষয়টি তুলে ধরেন যে যদি অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়, তাহলে বাংলাদেশ কেনিয়া বা আফ্রিকার অন্যান্য দেশের মতো হয়ে যেতে পারে।
কর্মকর্তাদের সংযত থাকার পরামর্শ দিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমাদের দেশে ১৯৭০ সালের পর এমন গণবিক্ষোভ আর কখনো হয়নি। তাই এটি একটি ব্যতিক্রম ঘটনা। আমাদের সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে।’
তরুণ সেনা কর্মকর্তাদের ক্ষোভ প্রকাশের মধ্য দিয়ে বৈঠকটি শেষ হয়। এর ৩ দিন পর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা একটি সামরিক হেলিকপ্টারে চড়তে বাধ্য হন, যেটা তাঁকে ভারতীয় সীমান্ত পেরিয়ে আগরতলায় নিয়ে যায়। সেখানে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি সি১৩০ পরিবহন উড়োজাহাজ অপেক্ষমাণ ছিল, সেটা তাঁকে (শেখ হাসিনা) দিল্লির উপকণ্ঠের হিন্দন বিমানঘাঁটিতে নিয়ে যায়।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের অবস্থা ছিল অস্বস্তিকর। কারণ, তাঁকে শেখ হাসিনা নিয়োগ দিয়েছিলেন। তা ছাড়া বৈবাহিক সূত্রে তিনি শেখ হাসিনার আত্মীয়। বিষয়টি সম্ভবত তাঁকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও সতর্ক করে তুলেছিল। বিশৃঙ্খলার মধ্যে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড মোকাবিলা ও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সেনা মোতায়েনকে যৌক্তিক হিসেবে তুলে ধরতে সেনাপ্রধান বলেছিলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। তারা ১ হাজার ৭১৯টি গুলি ছুড়েছে, ১৪ হাজার ফাঁকা গুলি ছুড়েছে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংস জনতার মুখোমুখি হয়ে ৩১টি উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে।

মতবিনিময়ে সেনাপ্রধানের পদক্ষেপের বৈধতা নিয়ে তদন্তের আহ´ান আসে। তরুণ মেজর মো. আলী হায়দার ভূঁইয়া সেনা মোতায়েনকালে সেনাবাহিনী যে ভূমিকা রেখেছে, তার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। নিজের বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি পবিত্র কোরআন থেকে উদ্ধৃত করেন, তিনি দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে আল্লাহর করুণা ভিক্ষা করেন এবং এতে যুক্ত না হওয়ার কথা বলেন। একজন কনিষ্ঠ কর্মকর্তার এই আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান শুধু বলেন, ‘আমিন’।