চন্ডিগড় ও কলকাতা ৩১ আগস্ট:ফের গোরক্ষকদের তাণ্ডব। এবার হরিয়ানায়। দেশের নানা প্রান্তে বিশেষ করে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে গোরক্ষকদের তাণ্ডব বেড়েই চলেছে। কখনও গরু চোর সন্দেহে, কখনও গোমাংস খাওয়ার গুজবকে হাতিয়ার করে হামলা হচ্ছে নিরীহ মানুষের ওপর। একবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আহমেদাবাদের একটি সভায় গোরক্ষকদের তাণ্ডবের সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু তার বক্তব্য যে গোরক্ষকদের কাজকর্মে কোনও প্রভাব ফেলেনি সারা দেশে একাধিক গণপিটুনির ঘটনা থেকেই পরিষ্কার।
বিফ খাওয়ার সন্দেহে এবার এক পরিযায়ী শ্রমিককে পিটিয়ে মারা হল। ঘটনাটি ঘটেছে হরিয়ানার চরখি-দাদরি জেলায়। মৃত শ্রমিকের নাম সাবির মল্লিক। তিনি বাংলার বাসিন্দা। এই ঘটনায় পুলিশ এখনও পর্যন্ত গোরক্ষা দলের পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে ২ জন নাবালক।
একজন সিনিয়র পুলিশ অফিসার জানিয়েছেন, সাবির মল্লিককে ২৭ আগস্ট খুন করা হয়। অভিযুক্তরা হল অভিষেক, মোহিত, রবিন্দর, কমলজিৎ এবং সাহিল কুমার। তারা খালি প্লাস্টিকের বোতল বিক্রির অজুহাতে সাবির মালিককে একটি দোকানে ডেকে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে। কিছু লোক এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করলে অভিযুক্তরা সাবিরকে অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়ে আবারও মারধর করে, ফলে তাঁর মৃত্যু হয়।
সাবির হরিয়ানার বান্ধরা গ্রামের কাছে একটি ঝুপড়িতে থাকতেন। জীবিকার জন্য বর্জ্য এবং খালি বোতল সংগ্রহ করতেন। অভিযুক্ত অভিষেক, মোহিত, রবিন্দর, কমলজিৎ এবং সাহিল কুমার সন্দেহ করেছিল যে সাবির বিফ খেয়েছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস) এর অধীনে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে।
নিহত সাবির মল্লিক দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর শিবগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা। শুক্রবার তাঁর দেহ বাড়িতে পৌঁছায়। সাবির সেখানে পুরনো লোহালক্কড় সংগ্রহ করে বেচতেন। স্ত্রী ও এক ছোট সন্তানের সঙ্গে ছ’মাস ধরে ছিলেন ওখানে। বুধবার দুপুরে কয়েকজন যুবক ওই পরিযায়ী শ্রমিককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। তিনি দীর্ঘক্ষণ না ফেরায় চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী। এরপর বিকেল ৫টা নাগাদ অন্য এক জায়গায় সাবিরের দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর সারা শরীরে মারধরের চিহ্ন ছিল বলে জানিয়েছে পরিবার। মৃতের দাদা বাবুর আলি মল্লিক বলেন, লোহালক্কড় কেনার প্রলোভন দেখিয়ে ভাইকে নিয়ে গিয়েছিল ওরা। সাবির যে ভ্যানরিকশ নিয়ে গিয়েছিলেন সেটি রাস্তার ধারে পাওয়া যায়। একটি গাড়িতে করে ভাইকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে সাবির পড়েছিলেন তার কিছুটা দূরে পাওয়া গিয়েছে আরও দু’জনের দেহ! তাঁরা অসমের বাসিন্দা বলে আমরা জানতে পেরেছি।
এদিকে, এই মৃত্যুর খবর পরিবারকে জানানোর পর সাবিরকে ওখানেই কবর দেওয়ার প্রস্তাব দেয় পুলিস। কিন্তু তাতে রাজি হয়নি পরিবার। পরিবারই টাকার জোগাড় করে সেখানে পাঠায়। ওখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ভাইয়ের দেহ যাতে তাঁর বাড়িতে পাঠানো হয়, সেই আবেদনই পুলিসের কাছে করেছিল পরিবার। অনেক কাকুতি মিনতি করার পরই তারা রাজি হয়। দেহ নিয়ে সেখান থেকে রওনা দেয় বুধবার।
পুলিস তদন্ত করে মৃতের পরিবারকে জানিয়েছে যে, ওই গ্রামে গোমাংসের হাড়গোড় উদ্ধার হয়। সেই থেকেই সন্দেহ হয় যে, ওই গ্রামের কেউ গোমাংস খেয়েছেন। অমনি সন্দেহের বশে সাবিরকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে মারা হয়। এই ঘটনায় ঘনিষ্ঠ মহলে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মৃতের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
