আমেরিকা কেন ১৯টি ভারতীয় কোম্পানিকে নিষিদ্ধ করল?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বুধবার, ৩০ অক্টোবর ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে রাশিয়াকে সাহায্য করার অভিযোগে বিভিন্ন দেশের মোট প্রায় ৪০০ সংস্থা ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল। এর মধ্যে রয়েছে ১৯টি ভারতীয় সংস্থা। রয়েছেন দু’জন ভারতীয় নাগরিকও। এই পদক্ষেপটি এমন এক সময়ে নেওয়া হল যখন আমেরিকার মাটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী শিখ নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুকে হত্যার ষড়যন্ত্রে ভারতীয় নাগরিকের অভিযুক্ত হওয়া নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। ভারত এবং রাশিয়া ছাড়াও নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে চিন, তুরস্ক, হংকং, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, সুইজারল্যান্ড সহ বেশ কয়েকটি দেশের সংস্থা ও ব্যক্তিরা। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সরকারের ট্রেজারি (অর্থ) বিভাগ, বাণিজ্য দফতর, আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট, এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আমেরিকার বিদেশ দফতর বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ইউক্রেনের যুদ্ধের পরিস্থিতিতে রাশিয়ায় অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া, আর্থিক লেনদেন এবং কূটনৈতিক যোগাযোগে সহায়তার অভিযোগে তারা এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যমের কয়েকটি খবরে দাবি করা হয়েছে, ‘অ্যাসেন্ট অ্যাভিয়েশন ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড’, ‘মাস্ক ট্রান্স’, ‘ফিউট্রেভো’ এবং ‘শ্রেয়া লাইফ সায়েন্সেস প্রাইভেট লিমিটেড’-এর মতো চারটি ভারতীয় সংস্থা বাইডেন সরকারের মূল নিশানা।

তবে এই প্রথম নয় যে আমেরিকা ভারতীয় সংস্থাগুলিকে টার্গেট করেছে। এর আগে ২০২৩ সালের নভেম্বরে, রাশিয়ান সেনাবাহিনীকে সহায়তা করার জন্য একটি ভারতীয় সংস্থাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

কোন ভারতীয় কোম্পানি ও ভারতীয় নাগরিকদের উপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং এর কারণ কী?

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর-এর তালিকায় ‘অ্যাসেন্ট অ্যাভিয়েশন ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড’, ‘মাস্ক ট্রান্স’, ‘ফিউট্রেভো’ এবং ‘শ্রেয়া লাইফ সায়েন্সেস প্রাইভেট লিমিটেড’-এর মতো চারটি ভারতীয় সংস্থা রয়েছে।
অভিযোগ করা হয়েছে যে অ্যাসেন্ড অ্যাভিয়েশন ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড সংস্থাটি ২০২৩-এর মার্চ থেকে ২০২৪ সালের মার্চ অবধি রাশিয়া ভিত্তিক সংস্থাগুলিতে ৭০০ টিরও বেশি চালান পাঠিয়েছে। এছাড়াও স্টেট আমেরিকা অফ ডিপার্টমেন্ট দাবি করেছে যে ২০২৩ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিলের মধ্যে মাস্ক ট্রান্স কোম্পানি প্রায় ২.৫ কোটি টাকার সরঞ্জাম পাঠিয়েছিল রাশিয়ায়। এছাড়াও আর একটি কোম্পানির বিরুদ্ধে রাশিয়ান সংস্থাগুলিকে ৩.৬ কোটি টাকার বেশি পণ্য দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে ইলেকট্রনিক ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট, সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট এবং অন্যান্য ফিক্সড ক্যাপাসিটার রয়েছে। এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ফিউট্রেভো কোম্পানির বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাশিয়ায় প্রায় ১২ কোটি টাকার ইলেকট্রনিক পণ্য সরবরাহ করার অভিযোগ রয়েছে। ড্রোন তৈরি করে এমন একটি সংস্থাকে এই উপাদান দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

ভারতীয় নাগরিকদের উপর নিষেধাজ্ঞা

আমেরিকা যে দুই ভারতীয় নাগরিককে নিষিদ্ধ করেছে তাদের নাম বিবেক কুমার মিশ্র এবং সুধীর কুমার। ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের মতে, বিবেক কুমার মিশ্র এবং সুধীর কুমার অ্যাসেন্ড অ্যাভিয়েশন-এর সহ-পরিচালক এবং আংশিক শেয়ারহোল্ডার।
অ্যাসেন্ড অ্যাভিয়েশন ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের ওয়েবসাইট অনুসারে, এই সংস্থাটি দিল্লিতে অবস্থিত এবং আন্তর্জাতিক স্তরে বিমান শিল্পের জন্য খুচরো যন্ত্রাংশের পাশাপাশি লুব্রিকেন্ট সরবরাহ করার জন্য কাজ করে।

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলার পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং জাপান সহ দেশগুলি রাশিয়ার উপর ১৬,৫০০ টিরও বেশি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এছাড়াও, ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ান ব্যাঙ্কগুলির প্রায় ৭০ শতাংশ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে এবং তাদের সুইফট ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা থেকে বাদ দিয়েছে। সুইফট অর্থাৎ ‘সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাঙ্ক ফিনান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন’। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সহজেই করা যায়। প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ফেব্রুরায়িতে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত শুরুর পর থেকেই রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল আমেরিকা-সহ পশ্চিমের দেশগুলি। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে নয়াদিল্লিকেও তারা ক্রমাগত চাপ দিয়েছে। যদিও ভারত সেই চাপ অগ্রাহ্য করে একের পর এক চুক্তি করেছে মস্কোর সঙ্গে। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ২০২৩ সালে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গোড়া থেকেই আপত্তি ছিল বাইডেন সরকারের। শেষ পর্যন্ত নয়াদিল্লিকে ‘বার্তা’ দিতেই এই পদক্ষেপ করা হল বলে কূটনীতি বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন।