নয়াদিল্লি, ২ জানুয়ারি :বছর শুরুর প্রথম দিনেই মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী রইল রাজধানী দিল্লি। ২০ বছরের এক তরুণীকে ছেঁচড়ে নিয়ে যায় এক ‘ঘাতক’ গাড়ি। আর তাতেই প্রাণ হারান তিনি। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার ভোরের দিকে সুলতানপুরীতে ঘটে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। স্কুটিতে করে যাচ্ছিলেন ২০ বছরের ওই তরুণী। সেই সময়ই একটি গাড়ি এসে স্কুটিটিতে সজোরে ধাক্কা মারে। গাড়ির নিচে আটকে যায় তরুণীর পা। সেই অবস্থাতেই তাঁকে টেনে হিঁচড়ে প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার নিয়ে যায় গাড়িটি। পরে গাড়ির চাকা থেকে তরুণীর দেহ বার করে রাস্তায় ফেলে চম্পট দেন তাঁরা। পুলিশ আধিকারিক হরেন্দ্র কে সিং জানান, গাড়ির নম্বর দেখে দীপক খন্না, অমিত খন্না, কৃষান, মিঠুন ও মনোজ মিত্তল নামে ৫ যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘাতক গাড়িটি অমিতের এক বন্ধুর আত্মীয়ের বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।
অভিযুক্তদের দাবি, একটি স্কুটিতে ধাক্কা দিয়েছিল তাদের গাড়ি। যদিও ওই তরুণীর যে পা আটকে গিয়েছিল তা নাকি টেরও পায়নি তারা। উল্লেখ্য যে, রবিবার ভোর চারটে নাগাদ রাজধানীর রাস্তা থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে তাঁর নগ্ন দেহ। ২০ বছরের ওই তরুণীর মা বলেন, “মেয়েই আমার সব ছিল। ও কাজে গিয়েছিল। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বেরিয়েছিল। বলেছিল ১০টার মধ্যে ফিরে আসবে।” নিহত তরুণীর মা আরও জানিয়েছেন, “ওর গায়ে অনেক পোশাক ছিল। কিন্তু, দেহ উদ্ধারের সময় কোনও পোশাক ছিল না। এটা কী ধরণের দুর্ঘটনা?” যদিও দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, কিছু সংবাদ মাধ্যমে এই মামলা সম্পর্কে ভুল দাবি করা হচ্ছে। অনেক সংবাদ মাধ্যমেই বলা হচ্ছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ বা ৩০২, কোনও ধারাই তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হয়নি। এদিন তাদেরকে দিল্লির এক নিম্ন আদালতে তোলা হয়। আদালত তাদের ৩ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। অন্যদিকে ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক বলে বর্ণনা করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। তাঁর মতে এটা বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ। ঘাতক গাড়িটির সওয়ারিদের তিনি ফাঁসি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী দীপক ধাইয়া বলেছেন, “তখন রাত ৩টে বেজে ২০ মিনিট। আমি দোকানের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। সে সময়ই প্রচণ্ড জোরে একটা শব্দ শুনতে পেলাম। আমি ভেবেছিলাম কোনও গাড়ির টায়ার ফেটেছে। কিন্তু তার পরই দেখলাম এক তরুণীকে ঘষটাতে ঘষটাতে দ্রুত গতিতে ছুটছে একটি গাড়ি। আমি তৎক্ষণাৎ পুলিশকে খবর দিই।” দীপক আরও বলেন, “ওই রাস্তায় বেশ কয়েক বার ইউটার্ন নেয় গাড়িটি। গাড়িটিকে থামানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু চালক গাড়ি থামায়নি।”
অন্যদিকে আপের দাবি, অভিযুক্তদের মধ্যে একজন বিজেপি সদস্য। তাই বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মরিয়া পুলিশ।সুলতানপুরীর ঘটনা নিয়ে সোমবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আপ নেতা সৌরভ ভরদ্বাজ। তাঁর দাবি, ঘটনায় অন্যতম মূল অভিযুক্ত মনোজ মিত্তল বিজেপি সদস্য এবং তাঁকে বাঁচাতে লেফটেন্যান্ট গভর্নর (এলজি) ভিকে সাক্সেনা থেকে শুরু করে দিল্লি পুলিশের তাবড় আধিকারিক মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
