দুর্নীতিগ্রস্তদের পাশে না থাকার স্পষ্ট বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর টাকা দেওয়ার নাম নেই কিল মারার গোঁসাই: কেন্দ্রকে বিঁধলেন মমতা

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজ্যের প্রাপ্য বকেয়া নিয়ে ফের কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার মালদার গাজোলের প্রশাসনিক সভার মঞ্চ থেকে মোদি সরকারের উদ্দেশে কটাক্ষের সুরে তিনি বলেন, ‘পয়সা দেওয়ার নাম নেই কিল মারার গোঁসাই। ১০০ দিনের কাজের সাত হাজার কোটি টাকা কেন্দ্র দেয় নি। আমাদের টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু দিচ্ছে না। আমাদের টাকা নিয়ে রাজনীতি করছে। বাংলায় টাকা না দিয়ে শুধু টিম পাঠাচ্ছে। অশ্বডিম্ব হবে। অন্য কোনও রাজ্যে তো কেন্দ্রীয় টিম যায় না। উন্নাও, উত্তর প্রদেশ বা গুজরাতে কোনও ঘটনা ঘটলে কটা টিম যায়?’ একই সঙ্গে দুর্নীতি নিয়েও বড় বার্তা দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো জানিয়ে দিয়েছেন, ‘শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে আশা করি ভালো বিচার হবে। যারা দোষী তাদের পাশে থাকব না। কোনও দায়িত্ব নেব না।’ নাম না করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও খোঁচা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন গাজোল কলেজ ময়দানে মালদা, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ২৬৪টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই প্রকল্পের জন্য ব্যয় হবে ৬৬৭ কোটি টাকা। সাধারণ মানুষের জন্য একগুচ্ছ সুবিধার কথা ঘোষণা করেন। মুখ্যমন্ত্রীর সভায় যোগ দিতে আসার পথে পথ দুর্ঘটনায় দুজন প্রাণ হারিয়েছেন। ওই ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করার পাশাপাশি মমতা জানিয়ে দেন, যে বাসটি দুর্ঘটনায় পড়েছে তা নিয়ম মেনে চালানো হচ্ছিল না। আমি রিপোর্ট চেয়েছি। ফিরহাদ হাকিম ও গোলাম রাব্বানীকে ওদের বাড়িতে পাঠিয়েছিলাম। আবার দেহ নিয়ে যাবে। দু’জনের পরিবারের দু’জনকে সরকারি চাকরি এবং দুই লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবে রাজ্য সরকার।’
মূল ভাষণে কেন্দ্রের আর্থিক বঞ্চনা নিয়ে গর্জে ওঠে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একজন খালি বলছেন রাস্তার টাকা দেব না। ১০০ দিনের কাজের টাকা দেব না। উনি দেওয়ার কে? এই সব টাকা তো জনগনের টাকা। আমাদের টাকা নিয়ে রাজনীতি করে, প্রকল্পের টাকা দেয় না অথচ কেন্দ্রীয় টিম পাঠায়। আমায় যত গালি দাও আমার কোনও সমস্যা নেই। তবে টাকা দিয়ে গালি দিলে সহ্য করব। যাঁরা মিথ্যে কথা বলছেন, জেনে নিন বাংলার সবাইকে একদিন আপনাদের সকলকে স্যালুট জানাতে হবে।’ সংখ্যালঘু থেকে ওবিসি স্কলারশিপ বন্ধ করে দেওয়ায় মোদি সরকারকে আক্রমণ করেন মমতা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র যে সব স্কলারশিপ বন্ধ করছে, তা চালু করেছে রাজ্য সরকার। আমরা মানুষের পাশে থাকতে চাই।’
নাম না করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে খোঁচা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দল থেকে কয়েকটা ডাকাত গদ্দার চলে গিয়েছে। আমি বেঁচে গিয়েছি। পুরুলিয়ার ছেলেমেয়ের চাকরির কোটাটাই তো কেটে দিয়েছিল। আদালতকে বলব, আপনারা খুঁজে দেখুন পুরুলিয়ায় কী হয়েছিল। পুরুলিয়ার কোটা নিজের পকেটে ভরেছিল। কীসের বিনিময়ে সেটা আর বলছি না। আমি তখন প্রশ্ন করেছিলাম, কেন ওদের বঞ্চিত করা হবে। আমি নতুন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলাম। আমাদের চোর বলে। আমরা যদি চোর হই, তাহলে ওরা ডাকাত।’
এদিনের সভামঞ্চ থেকে মতুয়াদের পাশে থাকারও আশ্বাস দিয়েছেন মমতা। সেই সঙ্গে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়েও সরব হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘মতুয়াদের জন্য আমরা সবটা করেছি। বিজেপি নির্বাচন এলে একটু ভাত খেয়ে বলবে আমরা মতুয়াদের বন্ধু। এনআরসির নামে সকলকে জেলে বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে। আগে এই সব বিষয় জেলাশাসক রা দেখতেন, এখন সব ক্ষমতা কেন্দ্রে নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছে। সিএএ-র নামে ভুল বোঝানো হয়েছে। মতয়ুা মা বীনাপাণি দেবী বেঁচে থাকার সময় তাঁর চিকিৎসার সব ব্যবস্থাও আমি করেছিলাম। তখন কেউ তাকিয়ে দেখেনি।’
মালদা, উত্তর দিনাজপুর ও দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে কাজের খোঁজে অনেকেই ভিন রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছেন। যাতে রাজ্যের ছেলেমেয়েদের কাজের জন্য ভিন রাজ্যে পাড়ি জমাতে না হয় তার জন্য রাজ্য সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ছেলেরা বাইরে কেন যাবে? রাজ্যে যা কাজ আছে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। স্কিল ট্রেনিং দিয়ে এখানেই চাকরির ব্যবস্থা হবে। সেই কাজ চলছে। প্রকল্প তৈরি হয়ে গেলেই আপনাদের জানাব।’ মালদা-মুর্শিদাবাদ-নদিয়ার নদী ভাঙন রোখাই যে রাজ্য সরকারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার এখন সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ নদীর ভাঙন রুখতে হবে। কেন্দ্র এখন আর টাকা দেয় না। সমীক্ষা করে দেখে নেওয়া হোক ভাঙন প্রবীণ এলাকা থেকে কাদের অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি টিম গড়ে সমীক্ষা চালিয়ে এই কাজ করা হবে।’