লখনউ ১২ মে : জ্ঞানবাপী মসজিদের অজুখানায় ফোয়ারার একটি পাথরকে ‘শিবলিঙ্গ’ বলে দাবি করা হচ্ছে বেশ কয়েকদিন থেকেই। মসজিদের সমীক্ষার পর থেকেই এই নিয়ে চরম বিতর্ক শুরু হয়েছে।শুক্রবার ইলাহাবাদ হাইকোর্ট আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়াকে (এএসআই) জ্ঞানভাপি মসজিদ কমপ্লেক্সের ভিতরে পাওয়া কথিত ‘শিবলিঙ্গ’-এর মতো কাঠামোর বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা বা জরিপের নির্দেশ দিয়েছে।জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে আদালতের নির্দেশিত একটি সমীক্ষার সময়ই কাঠামোটি পাওয়া গিয়েছিলেন মসজিদ প্রাঙ্গনের একটি ছোট পুকুর বা অজুখানার মধ্যে। তারপর থেকেই হিন্দু পক্ষ সেটিকে শিবলিঙ্গ বলে দাবি করেছে। অন্যদিকে মুসলিম পক্ষ জানিয়েছে, এটি একটি ফোয়ারা বা ঝর্না জাতীয় জিনিস। যা দীর্ঘ দিন ধরেই পুকুরের মধ্যে পড়ে ছিল।
বৈজ্ঞানিক সমীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে যে কথিত ‘শিবলিঙ্গ’ কত পুরানো, এটি কি সত্যিই ‘শিবলিঙ্গ’ নাকি অন্য কিছ। জ্ঞানভাপি মসজিদে উপাসনার অধিকার চেয়ে আবেদনকারীদের পক্ষে উপস্থিত আইনজীবী বিষ্ণু শঙ্কর জৈন এ কথা বলেছেন। কার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমে কথিত শিবলিঙ্গের বৈজ্ঞানিক সমীক্ষার দাবিতে দায়ের করা পিটিশনে এদিন হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্ত এল। এই বিষয়ে, ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ একটি সিল কভারে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
৫জন হিন্দু মহিলার তরফে এই আবেদন করা হয়।
বারাণসীর জেলা বিচারকের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল পিটিশনে। এর আগে, ইলাহাবাদ হাইকোর্ট প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগকে স্পষ্ট করতে বলেছিল যে জ্ঞানভাপি মসজিদের ভিতরে পাওয়া কথিত শিবলিঙ্গের কার্বন ডেটিং এটিকে ক্ষতি করতে পারে বা এর বয়সের নিরাপদ মূল্যায়ন করা যেতে পারে কিনা।এই আবহে এই পাথরের বয়স নির্ধারণ করা হলে জ্ঞানবাপী মসজিদের কোনও অংশের কোনও ক্ষতি হবে কি না, আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া তা জানতে চেয়েছিল ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। এর আগে হিন্দু পক্ষের আবেদন খারিজ করে বারাণসী আদালত রায় দেয়, মসজিদের অজুখানার পাথরের বয়স নির্ধারণ করতে কার্বন ডেটিং করা যাবে না। সেই রায়ের বিরোধিতায় ইলাহাবাদ হাই কোর্টে দায়ের হয় মামলা। সেই মামলা গ্রহণ করে উচ্চ আদালত। তারপর আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ডিজি-র উদ্দেশে নোটিশ জারি করেছিল ইলাহাবাদ হাই কোর্ট।
প্রসঙ্গত, বারাণসী আদালত কার্বন ডেটিংয়ের আবেদন খারিজ করে রায় দেয়, ‘যদি কার্বন ডেটিং বা গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডারের অনুমতি দেওয়া হয় এবং যদি কথিত ‘শিবলিঙ্গ’-এর কোনও ক্ষতি হয় তবে সুপ্রিম কোর্টের আদেশের লঙ্ঘন হবে এবং এটি সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতেও আঘাত করতে পারে।’ সেই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে সম্প্রতি হাইকোর্টে তাৎক্ষণিক রিভিশন আবেদন করা হয়। এই আবহে আদালত এএসআই-এর কাছে জানতে চাইল যে সেই পাথরের কার্বন ডেটিং করা হলে মসজিদের স্থাপত্যেক কোনও ক্ষতি হবে কি না।
প্রসঙ্গত, জ্ঞানবাপী মসজিদে শিবলিঙ্গ থাকার দাবি করে সেখানে পুজো করার আবেদন জানিয়ে মামলা দায়ের হয়েছিল বারাণসী আদালতে। হিন্দু পক্ষের সেই দাবি খারিজ করে পালটা মামলার আবেদন জানানো হয়। সেই মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছিল। পরে সুপ্রিম নির্দেশে সেই মামলা ফিরে আসে বারাণসী আদালতে। বারাণসী দায়রা আদালতে বিচারক একে বিশ্বেসের একক বেঞ্চ জানিয়ে দেয় যে হিন্দু পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলা এগোবে। মুসলিম পক্ষ অঞ্জুমানে ইন্তেজামিয়া কমিটির আবেদন খারিজ করেন বিচারক। জ্ঞানবাপী মসজিদ মামলায় বারাণসী জেলা আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যায় আঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটি। এরই মাঝে সেই পাথরের কার্বন ডেটিংয়ের দাবি উঠেছিল হিন্দু পক্ষের একাংশের তরফে।