নয়াদিল্লি ১৫ সেপ্টেম্বর: দেশের ধর্মনিরপেক্ষ বোধ ও চিন্তাধারা এবং ব্যবস্থা-আত্মাকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য নয়াদিল্লিতে “মানবীয় মূল্যবোধের ব্যবহারে ধর্মীয় বৈচিত্র্যের ভূমিকা”শীর্ষক দুই দিনের সেমিনার অনুষ্ঠিত হল।এই সেমিনারের আয়োজন করে দিল্লির জামিয়া হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ,সহযোগিতায় ছিল ইনস্টিটিউট অফ অবজেক্টিভ স্টাডিজ (আইওএস)।
বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিত্বকারী ধর্মীয় নেতা এবং আলেম, শিক্ষাবিদ, বিশিষ্ট চিন্তাবিদ এবং বুদ্ধিজীবীরা ধর্মীয় বৈচিত্র্যের মাধ্যমে মানবিক মূল্যবোধকে কাজে লাগানোর জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি স্থির সিদ্ধান্ত গ্রহণের পক্ষে মত দিয়েছেন। তারা সাম্প্রদায়িক বৈষম্যে জর্জরিত বর্তমান ভারতীয় সমাজের বাস্তবতাগুলিও সামনে আনেন। বক্তারা বলেন,আন্তঃবিশ্বাসের সংলাপ শুরু করতে হবে, একে অপরের ধর্মীয় অনুভূতিকে সম্মান করে প্রতিটি ধর্মের মূল বার্তা হিসেবে মানবিক মূল্যবোধ প্রচার করার দিকে লক্ষ্য দিতে হবে।
ইসকনের দিল্লির সভাপতি শ্রী কেশব মুরারি দাস সেমিনারে বলেন, “যে ধর্মীয় বিশ্বাসই অনুসরণ করি না কেন, আমরা দৃঢ়ভাবে এক ঈশ্বরে বিশ্বাস করি; অতএব একে অপরের বিরোধিতা করার কিছু নেই।মানবিক মূল্যবোধকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিতে হবে।”
যোধপুরের মাওলানা আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য এবং ইসলামিক স্টাডিজের অধ্যাপক, পদ্মশ্রী অধ্যাপক আখতারুল ওয়াসে এই অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন, “সত্যিকারের মানবতা তখনই টিকে থাকবে যখন নিজ নিজ ধর্মের বিশ্বাসীরা তাদের মূল মূল্যবোধকে মেনে চলবে । তারা অন্যদের অনুভূতিতে আঘাত না করে তাদের প্রতিপক্ষের বিশ্বাসকে সমানভাবে সম্মান করবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে পৃথিবীতে আজ সেই চেতনার অভাব রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন,“ইসলাম সহ কোন ধর্মই জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ করে না। সর্বশক্তিমান সবাইকে সৃষ্টি করেছেন এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত করেছেন। ভারত বহু ধর্মের জন্মস্থান; বিশ্বের প্রচলিত ধর্মগুলি তাদের সূচনার পরেই এই অঞ্চলে পৌঁছেছিল। মহাবীর জৈন, বুদ্ধ এবং অন্যান্য বিখ্যাত ধর্মের প্রতিষ্ঠাতারা ভারতে রোল মডেল।” ।
ইনস্টিটিউট অফ হারমনি অ্যান্ড পিসের পরিচালক ড. এমডি থমাস বলেন, “বৈচিত্র্য মানবিক মূল্যবোধের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ধর্মীয় বৈচিত্র্য মানব সৃষ্টির একটি উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র। এটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিখ্যাত শিখ প্রচারক ডঃ মনপ্রীত সিং জোর দিয়ে বলেন, গুরু নানক সর্বদা মানবিক মূল্যবোধকে ধর্মীয় শিষ্টাচার হিসেবে প্রচার করেছিলেন। একইভাবে কলেজ অফ হায়ার তিব্বতিয়ান স্টাডিজের মি. ভেন বলেন, মানবিক মূল্যবোধ সীমাহীন। অন্যের ধর্মকে সম্মান করার পাশাপাশি এই ধরনের বিষয়গুলিকে কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা আমাদের জানতে হবে।
মানবিক মূল্যবোধকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে ধর্মীয় বৈচিত্র্যের ভূমিকা বিষয়ক দুই দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলন তথা সেমিনারে দেশ-বিদেশের গবেষকদের উপস্থাপনাকে স্বাগত জানানো হয়। মালয়েশিয়া এবং মরিশাস থেকে কয়েকজন চিন্তাবিদ অনলাইন সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। যার ফলে শেষ পর্যন্ত এই জাতীয় সেমিনার একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে পরিণত হয় বলে আয়োজকরা দাবি করেন।
জামিয়া হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, ড, এম. আফশার আলম বলেন, ভারতে বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং ধর্ম রয়েছে যা সুন্দরভাবে এর সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক নীতির কথায় বলে।
আইওএস এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক প্রফেসর এম. আফজাল ওয়ানি,ইনস্টিটিউট অফ অবজেক্টিভ স্টাডিজের প্রতিষ্ঠাতা ড. মনজুর আলমের সংখ্যালঘুদের সমস্যা তুলে ধরতে সম্প্রীতির সঙ্গে অন্য ধর্মের মানুষকে কাছে টানার প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন।
