বিচারক বদলীতে স্থগিতাদেশ জারী হাইকোর্টের

বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে উঠে এক বিচারকের বদলী সংক্রান্ত মামলা। কনজিউমার ফোরামের জুডিশিয়াল মেম্বার (বিচারক) বদলির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে এই মামলা। এদিন বদলির নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ জারী করলো হাইকোর্ট। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ জানিয়েছেন, -‘ কতিপয় আইনজীবীর স্বার্থে এই ভাবে বিচারক বদলি করাকে সমর্থন করে না আদালত’। ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বদলির নির্দেশ কার্যকর করা যাবে না বলে জানালেন বিচারপতি।ওইদিনই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে ।রাজ্য সরকারের আইনজীবী তপন মুখোপাধ্যায় সওয়ালে দাবি করে জানান , -‘ জনস্বার্থে বিচারকদের বদলি করতেই পারে রাজ্য। এটা স্বাভাবিক’। সেসময় বিচারপতি জানতে চান, -‘ এর আগে কতবার এই ধরনের বদলি করা হয়েছে? কমজিউমার ফোরামের জুডিশিয়াল মেম্বার বদলি এটাই কি প্রথম?’ এর জবাবে সরকারি আইনজীবী জানান, -‘ বদলি করার অধিকার আছে প্রশাসনের। আসানসোল সহ মোট তিনটি বেঞ্চ রয়েছে রাজ্যে। তার জন্যই এই বদলি করা হয়েছে। এটা রুটিন বদলি। সুদেব মিত্র নামে এক বিচারককে কলকাতায় বদলি করা হয়েছে এবং শুভ্রশঙ্কর ভট্টকে বদলি করা হয়েছে আসানসোল। কারণ ওই বেঞ্চে প্রচুর মামলা পড়ে রয়েছে। বৃহত্তর জনস্বার্থে এই বদলি করা হয়েছে’।মামলাকারী বিচারকের আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ করে বলেন , -‘ কয়েকজন আইনজীবীর স্বার্থে আঘাত লেগেছে বলেই চক্রান্ত করে তাঁকে বদলি করা হয়েছে। তিনি কলকাতার বাসিন্দা। আচমকাই তাঁকে বদলি করা হল’। বিচারপতি তখন বলেন, -‘ এটা প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির ইচ্ছাকৃত সিদ্ধান্ত। আমি ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বদলির নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দিচ্ছি’। উল্লেখ্য, গত ৪ অক্টোবর মামলাকারী বিচারককে কলকাতার বেঞ্চ থেকে আসানসোল বেঞ্চে বদলি করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে একজন আইনজীবী গত ১৮ জুন স্বাস্থ্য কমিশনের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির কাছে দুর্নীতির অভিযোগ করেন। অগাস্ট মাসে প্রশাসনের তরফে তাঁর কাছে এ বিষয়ে জবাব চাওয়া হয়। মামলাকারী বিচারক তাঁর বক্তব্য প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁকে ৪ অক্টোবর বদলির চিঠি ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ মামলাকারীর। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ, -‘ রাজ্যের উপসচিব তাঁকে যে বদলির চিঠি দিয়েছিলেন তার উপর আপাতত স্থগিতাদেশ বজায় থাকবে’। এর পাশাপাশি রাজ্যকে হলফনামা দিয়ে তাদের বক্তব্য জানাতে হবে। পাশাপাশি আবেদনকারী বিচারকের যদি কিছু বলার থাকে তিনি তা আদালতকে জানাবেন বলে হাইকোর্ট নির্দেশ জারি করেছে। রাজ্যের তরফ থেকে দেওয়া বিচারকের বদলির নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। ‘কয়েকজন আইনজীবীর স্বার্থে এইভাবে বিচারক বদলি করাকে সমর্থন করে না আদালত’, বৃহস্পতিবারের শুনানিতে একথা স্পষ্ট জানিয়েছেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বদলির নির্দেশ কার্যকর করা যাবে না বলে জানিয়েছেন বিচারপতি।ওই দিন ফের শুনানি হবে মামলার। বিচারপতির তাত্‍পর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘বিচার ব্যবস্থার ওপর প্রশাসনকে দখল নিতে দিতে পারি না।’। উল্লেখ্য, রাজ্য সরকারের জুডিশিয়াল বিভাগ থেকেই বদলি করা যায় বিচারকদের।সম্প্রতি সুদেব মিত্র নামে এক বিচারককে কলকাতায় বদলি করা হয়। একই সঙ্গে শুভ্রশঙ্কর ভট্ট নামে অপর বিচারককে বদলি করা হয়েছে আসানসোল আদালতে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আসানসোল আদালতে অনেক মামলা পড়ে রয়েছে। বৃহত্তর জনস্বার্থে এই বদলি করা হয়েছে বলে দাবি রাজ্যের। এরপরই মামলা করেন বিচারক শুভ্রশঙ্কর ভট্ট।রাজ্যের আইনজীবী তপন মুখোপাধ্যায়, এই বদলিকে ‘রুটিন’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর বক্তব্য জনস্বার্থে কোনও বিচারককে বদলি করা যেতেই পারে, এটা একটি স্বাভাবিক সিদ্ধান্ত। বদলি করার অধিকার প্রশাসনের আছে বলেও মন্তব্য রাজ্যের।অন্যদিকে, মামলাকারী বিচারকের আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, কিছু আইনজীবীর স্বার্থে আঘাত লাগছে বলেই চক্রান্ত করা হয়েছে তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে। কলকাতার বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও চক্রান্ত করেই তাঁকে বদলি করা হয়েছে বলে দাবি আইনজীবীর।রাজ্যের ডেপুটি সেক্রেটারি বদলির চিঠি দিয়েছিলেন ওই বিচারককে। সেই চিঠির ওপর আপাতত স্থগিতাদেশ বজায় রাখছে হাইকোর্ট। রাজ্যকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, হলফনামা দিয়ে তাদের বক্তব্য জানাতে হবে। পাশাপাশি মামলাকারী বিচারকের বিরুদ্ধে যদি কিছু বলার থাকে, সেটাও জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্যকে।আগামী ৩০ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে।