দার্জিলিং চা উৎপাদনে ভাটার টান, ৫০ বছরে এত কম উৎপাদন এই প্রথম

চায়ের গুণাগুণ নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমই দার্জিলিং চায়ের নাম আসে। দার্জিলিং চায়ের মূল বৈশিষ্ট্য এতে অন্য কোন জাতের মিশ্রণ নেই। স্বাদ স্বতন্ত্র। কখনও কখনও দার্জিলিং চা-কে নতুন তৈরি মুদ্রার সঙ্গে তুলনা করা হয়। ঝকঝকে। বিশেষ সুগন্ধ, স্বাদ দার্জিলিং চায়ের বৈশিষ্ট্য। চা বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন এপ্রিকট, পিচ, মাসকাট আঙ্গুর ও ভাজা বাদামের মিলিত স্বাদ ধারণ করে দার্জিলিং চা। সব মিলিয়ে অদ্ভুত স্বাদের এ চা বিশ্বের প্রিময়াম চা হিসেবে বিবেচিত। অন্য কোনো অঞ্চলের চায়ে এ স্বাদ পাওয়া যায় না। দার্জিলিং চা অনেক ক্ষেত্রে ‘চা জগতের শ্যাম্পেন’ বলে অভিহিত হয়।

এই কারণে দার্জিলিং চা-এর বিশ্বজোড়া নাম। আর ২০২৩ সালে সেই দার্জিলিং চায়ের উৎপাদন এবার মারাত্মকভাবে মার খেয়েছে। এবার দার্জিলিং চায়ের উৎপাদন অন্তত ৬.১ থেকে ৬.৩ মিলিয়ন কেজি উৎপাদিত হয়েছে বলে খবর। অভিজ্ঞ শিল্প মহলের মতে, গত ৫০ বছরে এত বড় ধাক্কা দার্জিলিং চায়ের উৎপাদনে আগে কোনও দিন হয়নি।২০২২ সালে চায়ের উৎপাদন হয়েছিল ৬.৯ মিলিয়ন কেজি। আর ২০২৩ সালে সেই উৎপাদন হয়েছিল অন্তত ৯ শতাংশ কম। পরিসংখ্যান বলছে জানুয়ারি থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে চায়ের উৎপাদন হয়েছিল ৬ মিলিয়ন কিলোগ্রাম। ক্যালকাটা টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়নের তথ্য এটাই বলছে।

টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুসারে সিটিটিএ সেক্রেটারি জেনারেল কল্যাণ সুন্দরম জানিয়েছেন, ২০২২ সালে ডিসেম্বর মাসে চায়ের উৎপাদন হয়েছিল ৬০,০০০ কেজি। ২০২৩ সালের পরিসংখ্যানটাও খুব শীঘ্রই আসবে। তবে সেখানে ফারাক বড় একটা নেই বলে শিল্প মহলের অভিমত।

এদিকে ২০১৭ সালের পর থেকে এত কম চায়ের উৎপাদন কোনও দিন হয়নি। তবে একটু পেছন ফিরলে দেখা যাবে ২০১৭ সালে পাহাড়ে ধর্মঘট চলছিল। তার জেরে উৎপাদন মারাত্মকভাবে মার খায়।

তবে এবার শুধু যে চায়ের উৎপাদন মার খেয়েছে সেটাই নয়। নিলামেও চায়ের গড় দাম ক্রমশ কমতে থাকে। সেভাবে এবার চায়ের দাম নিলামে ওঠেনি। এদিকে ২০১৫ সালে নিলামে চায়ের দাম সবথেকে কম হয়েছিল। সেবার চায়ের দাম উঠেছিল ২৯০ টাকা প্রতি কেজি। আর ২০২২ সালের সঙ্গে তুলনা করলে এবার চায়ের দাম প্রায় ৭.৬ শতাংশ কমে যায়। ২০২৩ সালের চায়ের দাম হয় ৩১৫ টাকা প্রতি কেজি।

এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, দার্জিলিং চা যা উৎপাদিত হয় তার মাত্র ২০ শতাংশই নিলামে দেওয়া হয়। বাকি বেশিরভাগ চা ব্যক্তিগতভাবে বিক্রি করা হয়। সব মিলিয়ে নিলামে তোলা হয়েছিল ১.৫ মিলিয়ন কেজি চা। কিন্তু এবার প্রশ্ন ২০২৩ সালে চায়ের উৎপাদন মার খেল কীভাবে?

দার্জিলিংয়ে বর্তমানে ১০টি চা বাগান বন্ধ। সেখানে প্রায় ১ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়। আর অন্যদিকে দেখা যায় চা শ্রমিকদের অভাবের জেরে চা তোলার কাজও কিছুটা মার খেয়েছে। তবে এর সঙ্গেই আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনাও চায়ের উৎপাদন মার খাওয়ার ক্ষেত্রে একটা বড় ফ্যাক্টর।