প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্পর্কে আপত্তিজনক মন্তব্য করা নিয়ে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে মালদ্বীপের। দিল্লিতে নিযুক্ত সেদেশের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে বিদেশমন্ত্রক। সাউথ ব্লকে বিদেশমন্ত্রকে আসেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম সাহিব। বিষয়টি নিয়ে কড়া নিন্দা করেছে ভারত। প্রবল নিন্দার মুখে ভারত এবং প্রধানমন্ত্রী মোদি সম্পর্কে মন্তব্য করা তিনজন মন্ত্রী মালশা শরিফ, মারিয়াম শিউনা এবং আবদুল্লা মাহজুম মজিদকে সাসপেন্ড করে মহম্মদ মুইজ্জু সরকার।
সরকারিভাবে তিন মন্ত্রীর বক্তব্যের থেকে দূরত্ব তৈরি করেছে মালদ্বীপ সরকার। অন্যদিকে, সেদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত মুনু মুহাওয়ারকে মালদ্বীপ সরকার জানিয়েছে তিন মন্ত্রীর বক্তব্য সরকারের বক্তব্য নয়। নরেন্দ্র মোদি সম্পর্কে মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন মালদ্বীপের বিদেশমন্ত্রী মুসা জামির। তাঁর বক্তব্য, ভিন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান সম্পর্কে এই ধরণের অপ্রত্যাশিত এবং এর সঙ্গে সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই। মালদ্বীপ তার প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন তিনি। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে মুসা জামির লিখেছেন, ‘সম্প্রতি একজন বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান এবং আমাদের প্রতিবেশী দেশের প্রধান সম্পর্কে করা মন্তব্য অপ্রত্যাশিত এবং সেই মন্তব্য মালদ্বীপ সরকারের সরকারি অবস্থান নয়। আমাদের সমস্ত সঙ্গীর সঙ্গে আমরা ইতিবাচক, কূটনৈতিক সম্পর্ক চাই বিশেষ করে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে, সেই সম্পর্কের ভিত্তি পারস্পরিক সম্মান এবং বোঝাপড়া।’ তিন মন্ত্রীর মন্তব্যের নিন্দায় সরব হয়েছেন মালদ্বীপের প্রাক্তন ডেপুটি স্পিকার ইভা আবদুল্লা। তিনি বলেছেন এই মন্তব্য, লজ্জাজনক এবং বর্ণবাদী। তিনি বলেছেন, ‘ভারতীয়দের ক্ষোভের স্বাভাবিক কারণ রয়েছে। এই ধরণের মন্তব্য আপত্তিকর। তবে এই মন্তব্য মালদ্বীপের সাধারণ মানুষের বক্তব্য ও মতামত নয়। এই ধরণের লজ্জাজনক মন্তব্য করার জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।’ এদিকে, এই ধরণের মন্তব্য করার পরেই মালদ্বীপ বয়কটের ডাক দিয়েছেন নেটিজেনরা। পর্যটন মালদ্বীপের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতি। অবিলম্বে সেই ট্রেন্ড বদলের জন্য ভারতবাসীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন মালদ্বীপের সাংসদ ইভা আবদুল্লা। ছুটি কাটাতে ভারতবাসীকে ফের মালদ্বীপে পা রাখার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। ইভা বলেছেন, ‘দু’একজনের বক্তব্যে ভারতবাসীর প্রতি মালদ্বীপের মানুষের মনোভাব প্রকাশ পায় না। আমরা ভারতের মানুষকে বয়কটের ট্রেন্ড শেষ করার আবেদন জানিয়ে ফের এখানে আসার আবেদন জানাচ্ছি।’ তবে ক্ষোভে জল ঢালা যায়নি ভারতের। লাক্ষাদ্বীপের প্রশাসক প্রফুল্ল খোড়া বলেছেন, ‘ভারত কখনও এই ধরণের অপমান সহ্য করবে না এবং প্রধানমন্ত্রীকে সহমর্মিতা জানাচ্ছে ভারত। প্রধানমন্ত্রীর পাশে থাকার জন্য আমি লাক্ষাদ্বীপ সহ সমগ্র ভারতবাসীকে ধন্যবাদ জানাই।’ মালদ্বীপ বয়কট করে লাক্ষাদ্বীপকে পর্যটন ডেষ্টিনেশন বিবেচনা করার জন্য সামাজিক মাধ্যমে সরব অক্ষয় কুমার, অমিতাভ বচ্চন থেকে শুরু করে ক্রিকেটার বীরেন্দ্র শেওয়াগ।নেটিজন ও পর্যবেক্ষকমহলের মতে, বিষয়টি এবার থামানো উচিত। কিন্তু বলিউডের সেলিব্রিটিরা এই অভিযোগে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।কূটনৈতিকভাবেই এই সমস্যার সমাধান হোক।
ভারতের সঙ্গে এই কূটনৈতিক সংঘাতের মধ্যেই চিনে পা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মুইজু। চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, বেজিং মালদ্বীপকে সমান অংশীদার মনে করে এবং তাদের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে। আরও বলা হয়েছে, ‘মালদ্বীপ এবং ভারতের পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককেও সম্মান করে বেজিং। দিল্লির সঙ্গে ম্যালের সম্পর্ক ভাল রাখার কারণ সম্পর্কেও অবগত। চিন এবং ভারতের সংঘাতের কারণে ম্যালকে কখনও দিল্লিকে প্রত্যাখান করতে বলেনি অথবা মালদ্বীপ ভারতের সম্পর্ককে কখনও বিপদ হিসেবে বিবেচনা করেনি।’
এরই মধ্যে মালদ্বীপের ছবি দিয়েই মালদ্বীপ বয়কটের ডাক দিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। যা নিয়ে পাল্টা ট্রল শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যদিও পরে পরিস্থিতি বুঝে সেই টুইট মুছে দেন বিজেপির এই শীর্ষ নেতা।
মালদ্বীপ-লাক্ষাদ্বীপ ইস্যুতে এই মুহূর্তে উত্তাল দেশ। মালদ্বীপ বয়কটের ডাক দিয়েছেন দেশের মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিজেপির শীর্ষ স্থানীয় নেতারা। অভিনেতা, শিল্পপতি থেকে দক্ষিণপন্থী কর্মীরাও এই তালিকায় রয়েছেন। সকলেই সোশ্যাল মিডিয়ায় লাক্ষাদ্বীপ সহ ভারতের বিভিন্ন সমুদ্র সৈকতের ছবি দিয়ে মালদ্বীপের পরিবর্তে সেই জায়গাগুলিতে ভ্রমণের বার্তা দিচ্ছেন। এই তালিকায় রয়েছেন ভূবিজ্ঞান দপ্তরের মন্ত্রী কিরেন রিজিজুও।
আর এক শীর্ষ বিজেপি নেতা তথা অভিনেতা রবি কিষানের টুইট উদ্ধৃত করে #DekhoApnaDesh হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে দুটি সমুদ্র সৈকতের ছবি নিজের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেন অরুণাচলের এই রাজনীতিবিদ। এই দুটি ছবিই আসলে মালদ্বীপের। এমনটাই জানিয়েছেন ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং পোর্টাল অল্ট নিউজের সহ প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ জুবেইর। একই দাবি আরও একাধিক নেটিজেনের। বিষয়টি নজরে আসতেই তড়িঘড়ি পোস্টটি সরিয়ে দেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
বলিউড অভিনেতা রণবীর সিংও এই একই ভুল করেছেন। মালদ্বীপের ছবি নিজের এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করে ভারতের সংস্কৃতি অনুসন্ধান করার আহ্বান জানান তিনি। নেটিজেনদের কটাক্ষের মুখে পড়ে পোস্টটি এক্স থেকে সরিয়ে দেন অভিনেতা।
প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার বীরেন্দ্র শেওয়াগও একই ভুল করেছেন। তবে তিনি মালদ্বীপের পরিবর্তে ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়ার বোরা বোরা দ্বীপের ছবি ব্যবহার করে সেটিকে ভারতের একটি দ্বীপ বলে উল্লেখ করেছিলেন।
